মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ৮৫ বাংলাদেশি, গেলেন ১২৩ বিজিপি-সেনা
মিয়ানমারে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ৮৫ বাংলাদেশি। অন্যদিকে মিয়ানমারে সংঘাতের জের ধরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২৩ বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও ইউএমএস চিন ডুইন (সেনা) সদস্য স্বদেশে ফিরে গেছেন। আজ রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে তাদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলে।
দেশে ফেরা ৮৫ বাংলাদেশি সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন।
মিয়ানমারের মলামাইন কারাগারে দেড় বছর কারাভোগ করে ফিরেছেন কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম গোয়ালিয়াপালং এলাকার নজির আহমদের ছেলে বদিউল আলম। তিনি জানান, দেড় বছর আগে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়াগামি দালালের খপ্পরে পড়েন। রাতের আঁধারে অন্যদের সঙ্গে টেকনাফের নয়াপাড়া থেকে ট্রলারে উঠেন। ওই ট্রলারে ১৪৫ জন ছিল। ট্রলারটি বাহির সমুদ্র হয়ে থাইলেন্ড সিমান্তে পৌঁছে। সেখানে সব যাত্রীকে আরেকটি ট্রলারে হস্তান্তর করার সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ তাদের ঘিরে ফেলে। পরে ট্রলারসহ সবাইকে মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে নিয়ে যায় তারা।
বদিউল আলম আরও জানান, তিনি মিয়ানমারের মলামাইন কারাগারে ১৭ মাস ছিলেন। এসময় মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন। মিয়ানমারের প্রশাসন মাসখানে আগে তাঁকে আকিয়াব নিয়ে এসে একটি বড় কক্ষে রাখে। ওই কক্ষে তারা ৮৫ জন ছিল। সেখান থেকে তাঁরা দেশে ফিরেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, তিন দফায় অনুষ্ঠিত প্রত্যাবসন প্রক্রিয়ার মতোই এবারও ভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করা ৮৫ বাংলাদেশিকে নিয়ে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি ১২৩ বিজিপি ও সেনা সদস্যকে নিয়ে স্বদেশে ফেরত যান।
পুরো প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. রাহাত বিন কুতুব তদারকি করেছেন।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গততকাল শনিবার সকালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ‘ইউএমএস চিন ডুইন’ নামের জাহাজটি ৮৫ বাংলাদেশিকে নিয়ে রওনা হয়। জাহাজটি গভীর সাগরের বাংলাদেশ জল সীমানায় অবস্থান নেয়। পরে সেখান থেকে আজ সকাল ৮টায় তাদের বাংলাদেশি একটি জাহাজে করে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নিয়ে আাসা হয়।
এদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় বিজিবির হেফাজতে থাকা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্যকে বাসযোগে আনা হয়। এরপর উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা তাদের হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরত বাংলাদেশিদের তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রত্যাগত ৮৫ বাংলাদেশির মধ্যে ২৬ জন মিয়ানমারের মলামাইন কারাগারে, ১৬ জন পাথেইন কারাগারে, ৩ জন চকমারউ কারাগারে এবং বাকিরা রাখাইনের বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন। প্রত্যাবর্তনকারীরা কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও ঢাকা জেলার বাসিন্দা। ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সিতওয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের অব্যাহত প্রচেষ্টায় আরও একবার বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
এ নিয়ে গত ১৫ মাসে মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারে কারাভোগ করা সর্বমোট ৩৩২ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
এর আগে গত ৯ জুন ৪৫ বাংলাদেশি কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেন। ওই দিন মিয়ানমারে ফেরত যায় ১৩৪ বিজিপি ও সেনা সদস্য। ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেন ১৭৩ বাংলাদেশি। একই সঙ্গে ওই দিন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। এরও আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।