তরুণ উপদেষ্টার ছোঁয়ায় পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে ক্রীড়াঙ্গন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জন্ম হয়েছে নতুন বাংলাদেশের। অবসান ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের। একটি শেষ মানে, আরেকটি নতুন শুরুর দুয়ার উন্মুক্ত হওয়া। বিগত সরকারের আমলে চারদিকে যেখানে ছিল হাহাকার, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে করছে সংস্কার। সংস্কারের হাওয়া লেগেছে ক্রীড়াঙ্গনেও। তারুণ্যের প্রতিনিধি হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্ব পেয়ে গালগল্প নয়, সমাধানের পথে নেমেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মাত্র তিন মাসে তিনি যা করে দেখিয়েছেন, গত ১৬ বছরের হিসেব করলে তা ছিল অবিশ্বাস্য!
শুরু থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করা আসিফ মাহমুদ এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা আগামীর বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনের ভিত মজবুত করতে সাহায্য করবে। কী কী করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী ক্রীড়া উপদেষ্টা। পাঠক চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক…
বিভাগীয়-জেলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠন
ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক হওয়ার পর থেকেই সংস্কারের কথা শুনিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। সেই সংস্কার আনতে লেগে পড়েন প্রথম সপ্তাহ থেকেই। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ওপর দায়িত্ব পড়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই পরিবর্তনের পালা বদল শুরু হয়।
ক্রীড়া ক্ষেত্রের অভিভাবক হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, সব জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, সব বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, সব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও উপজেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দেন। এরপর গঠন করেন অ্যাডহক কমিটি। দেশের ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠু, সক্রিয়, সচল ও নির্বিঘ্ন রাখার জন্য দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেন উপদেষ্টা।
অভিভাবক শূন্য বিসিবিতে প্রাণ ফেরানো
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দীর্ঘ এক যুগ একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই আড়ালে চলে যান তিনি। দেশের ক্রিকেট বোর্ড হয়ে পড়ে অভিভাবক শূন্য!
এই শূন্য ক্রিকেটাঙ্গনে প্রাণ ফেরাতে বড় ভূমিকা পালন করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। বিসিবি দ্রুত সচল করতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত দুই পরিচালকের জায়গা খালি করার সিদ্ধান্ত নেয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এনএসসির কোটায় দুজন পরিচালক থাকেন বিসিবিতে। সে দুজন পরিচালক তথা জালাল ইউনূস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে পদত্যাগের অনুরোধ জানায় এনএসসি। জালাল ইউনূস স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। আরেকজন না করলেও তাকে অব্যাহতি দিয়ে এই দুই জায়গায় নেওয়া হয় সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ এবং ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। গত ২১ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে হয়ে যাওয়া বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সভায় পাপনের পদত্যাগ নিশ্চিত হয়, সেই সঙ্গে বিসিবির সভাপতির চেয়ারে বসেন ফারুক আহমেদ। বিসিবি পায় নতুন অভিভাবক।
একযোগে ৪২ সভাপতির অব্যাহতি
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন শুরুর প্রথা দীর্ঘ ২৬ বছরের। কিন্তু ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়া বাকি সব ফেডারেশনের সভাপতিই দেওয়া হতো দলীয় সরকারের পক্ষ থেকে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তাই ফেডারেশনের দায়িত্বে ছিলেন স্বৈরাচার সরকারের মনোনীত বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীরা। এমনকি যাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই, তারাও বসে ছিলেন ফেডারেশনের বড় বড় পদে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার অধীনে ১০ সেপ্টেম্বর একযোগে দেশের ৪২টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার আগে কাবাডি, ব্রিজ ও দাবা ফেডারেশনের সভাপতিকে অপসারণ করেছিল।
এক পদে দুবারের বেশি নয় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেন আসিফ মাহমুদ। সেখানেই সাফ জানিয়ে দেন, কোনো ক্রীড়া সংস্থার এক পদে কেউ দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। সেই সঙ্গে প্রতিটি ক্রীড়া সংস্থাকে তাদের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং সংস্থার কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন ক্রীড়া পরিষদকে জানানোর জন্য বলেন। মোটকথা সকল কিছু নিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ঘোষণা দেন তিনি।
ক্রীড়াঙ্গনের সার্চ কমিটি পুনর্গঠন
নতুন উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের উদ্দেশে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় গত ২৯ আগস্ট পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু তার অন্যতম সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুলের কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয় সরকার। অপসারণ করা হয় তাকে। পুনর্গঠন করা হয় নতুন সার্চ কমিটি। যেখানে নতুন করে যুক্ত করা হয় বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুনীরুল ইসলামকে।
এই সার্চ কমিটির আহ্বায়ক সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন জোবায়েদুর রহমান রানা। অন্য সদস্যরা হলেন—সাবেক হকি খেলোয়াড় অবসরপ্রাপ্ত মেজর ইমরোজ, প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার, সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সার ও বিকেএসপির বর্তমান মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুনীরুল ইসলাম।
বাফুফেতে সালাউদ্দিন অধ্যায়ের অবসান
সরকার বদলের পরও নিজ পদে বহাল থাকতে চেয়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। ফুটবল ভক্তরা তার পদত্যাগের দাবিতে আওয়াজ তুললেও তিনি ছিলেন অনড়। এমনকি নির্বাচন করার ঘোষণাও দেন সালাউদ্দিন। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন—তিনি পদত্যাগ করছেন না। নির্বাচনে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন! শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাফুফের নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহার করেন তিনি। বাফুফেতে অবসান ঘটে কাজী সালাউদ্দিন যুগের। ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর থাকার পর বাফুফে থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
নির্বাচন ও বাফুফের নতুন অভিভাবক
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বাফুফে নির্বাচন হয় গত ২৬ অক্টোবর। ফিফার নির্দেশনায় বাফুফে নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। এরপরও বাংলাদেশের পারিপার্শ্বিকতায় বাফুফে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও শেষ পর্যন্ত সব ছাপিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তাবিথ আওয়াল। প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হলেন তাবিথ আউয়াল। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় তাবিথ আওয়ালের নতুন কমিটি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পরিবর্তন
বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই সরকারি প্রতিষ্ঠানেও এসেছে পরিবর্তন। গত দুই যুগের বেশি সময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব ছিলেন রশিদুজ্জামান সেরনিয়াবাত। তাকে সরিয়ে বান্দরবান স্টেডিয়ামের প্রশাসক করা হয়।
রশিদুজ্জামানের মতো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দুই যুগ কাজ করেছেন কবিরুল হাসান। আইন কর্মকর্তার পদ স্থায়ী না হওয়ায় এবং তার কাজ নিয়ে প্রশ্ন থাকায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এনএসসির প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও রবদবল হয়েছে।
ক্রীড়া পরিদপ্তরে বদল
ক্রীড়া পরিদপ্তর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সরকারি দপ্তর। যার অধীনে দেশে ছয়টি শারীরিক শিক্ষা কলেজ এবং প্রতি জেলায় একজন করে ক্রীড়া অফিসার রয়েছে। সরকার বদলের পর এই অফিসারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। নেতৃত্বে থাকা দুই কর্মকর্তাকে পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থেকে বদলি করে ক্রীড়া অফিসার করা হয়। সেই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের অভিযোগও তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
পাকিস্তানে ঐতিহাসিক জয়
অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র তিন মাস পূরণ হলো। এই তিনমাসের মধ্যে নানা কাজ আর সংস্কারের মাঝে এসেছে মাঠের সফলতাও। এই সরকার আসার পরপরই পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ খেলতে উড়াল দেয় বাংলাদেশ। সেখানে, পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ দল। এই অর্জনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সংবর্ধনা দেন। বিসিবির পক্ষ থেকে বোনাস দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের। যেখানে আসিফ মাহমুদ নিজে উপস্থিত থেকে প্রেরণা যোগান ক্রিকেটারদের।
সাফে মেয়েদের বিজয় উৎসব
অন্তর্বর্তী সরকারের এই ৯০ দিনের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় অর্জন নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মুকুট ধরে রাখা। অক্টোবরে নেপালের মাটিতে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে আরেকবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয় বাংলার মেয়েরা। যে অর্জনের কারণে খুশির জোয়ারে ভাসে বাংলাদেশ। তাছাড়া সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপেও নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
সাবিনাদের সংবর্ধনা ও এক কোটি টাকা
সাফ জিতে গত ৩১ অক্টোবর দেশে ফেরেন সাবিনা খাতুনরা। এই এক রাতের মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের জন্য তৈরি করা হয় ছাদখোলা বাস। বিমানবন্দরে পা রেখে মেয়েরা করেন শোভাযাত্রা। এরপর বাফুফে ভবনে এলে ঋতুপর্ণাদের সংবর্ধনা দেন আসিফ মাহমুদ। সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়নদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা উপহার দেন নতুন উপদেষ্টা। তার আগে অনূর্ধ্ব-২০ দলের চ্যাম্পিয়নদেরও সংবর্ধনা দেন আসিফ মাহমুদ। তারাও দেশে ফেরার পর তাৎক্ষণিকভাবে দলের সবাইকে ২৫ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেন আসিফ মাহমুদ।
সাবিনাদের আবদার ও পূরণের আশ্বাস
বেতন-ভাতা, আবাসন নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের সমস্যা বহুদিনের। বারবার সাফল্য এনে দিলেও মেয়েদের এই সমস্যার সমাধান হয়নি। তবে, এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কাছ থেকে শুনেছেন তাদের সব সমস্যা কথা। গত ২ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মেয়েদের সংবর্ধনা দেন। সেখানে মেয়েদের সব আবদার শোনেন ও পূরণ করার আশ্বাস দেন। তাছাড়া মেয়েদের বেতন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমস্যা নিরসনের কথাও জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা।
অবকাঠামো পরিদর্শন
তিন মাসের এই অল্প সময়ে অবকাঠামোগত পরিবর্তনেও বেশ নজর দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন। সেখানে আসন সংখ্যা বাড়ানোসহ বিপিএলের আগে কীভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। গিয়েছেন চট্টগ্রামেও। সেখানে স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম নিয়েও ভাবছেন তিনি। ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই বিদ্যমান। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড স্টেডিয়াম করার কথা জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা। সেই জন্য চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামটিকে ফুটবলের জন্য ডেডিকেটেড স্টেডিয়ামে পরিণত করার কথা জানান তিনি। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সংস্কার করার কথার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি) নির্দেশনা দেন।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দোকান পরিদর্শন
এই স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দোকান পরিদর্শনেও গিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য দোকানের কারণে খেলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অথচ এই দোকানগুলো থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ খুব কম রাজস্ব পায়। এসব নিয়ে নানা অভিযোগ আছে। এই সিন্ডিকেট নিয়ে নানা প্রশ্নও আছে। কারণ প্রতি স্কয়ার ফিটের জন্য মাত্র ২৬ টাকা ভাড়া পায় এনএসসি। কিন্তু দোকনিদের ভাড়া গুনতে হয় ২১৭-২২০ টাকা ফিট হিসেবে। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের সাথে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ-মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন। এই ভাড়া নিয়ে নয়-ছয়ের ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। এসব দোকানের সঠিক ভাড়া থেকে বেশি অর্থ পেলে অস্বচ্ছল ফেডারেশনগুলো ক্রীড়া খাতে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
সাকিব ইস্যুতে টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরার ইস্যুতে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় দেশের ক্রিকেটে। নতুন উপদেষ্টার কল্যাণে যখন সাকিব দেশে ফিরে খেলার অনুমতি পান, তখনই একদল শিক্ষার্থী নামে আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চুপ থাকা সাকিবকে কিছুতেই দেশের মাটিতে খেলতে দেখতে চান না তারা। তোলেন জোরালো আন্দোলন। গ্রাফিতিতে ভরিয়ে তোলেন শেরেবাংলার দেয়াল। এমন অবস্থায় সিরিজ নিয়ে জেগেছিল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত সাকিবের নিরাপত্তার জন্যই তাকে দেশে না ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর কড়া নিরাপত্তার মাঝে নির্বিঘ্নে হয়ে যায় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সিরিজ।
এ ছাড়াও দায়িত্ব পাওয়ার এই তিন মাসের মধ্যেই ক্রীড়া সাংবাদিক-সংগঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন আসিফ মাহমুদ। সভায় সবার পরামর্শ শোনেন। উন্নতির পথে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া সেই পরামর্শ নেন। সংযুক্ত আর আমিরাতেও নারী বিশ্বকাপের সময় সফর করেন। সেখানে আইসিসির ভেন্যু পরিদর্শনসহ বাংলাদেশের মেয়েদের ম্যাচে মাঠে বসে অনুপ্রেরণা যোগান এই উপদেষ্টা।
সময় তো পেরিয়েছে মাত্র তিন মাস। সামনে আরও সময় পাবেন। তিন মাসে যতটা করেছেন সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে অচিরেই আরো আলোকিত হবে দেশের ক্রীড়াঙ্গন, এমনটা প্রত্যাশা করাই যায়।