শেষ হলো ‘বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব’
শেষ হলো ‘বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৬’। দেশের তরুণদের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণে আরো আগ্রহ বাড়ানো ও চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশ ও প্রসারের উদ্দেশ্যে সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজন করা হয়।
প্রথমবারের মতো ২ অক্টোবর থেকে সারা দেশের শিল্পকলা একাডেমিতে একযোগে একই সূচি অনুসারে শুরু হয় এ উৎসব। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবে ১৯৭১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নির্মিত ৮৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয় এ আয়োজন। সদ্যপ্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হককে উৎসর্গ করা এই আয়োজনের গতকাল ছিল সমাপনী দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি স্থপতি লায়লুন নাহার স্বেমি ও চলচ্চিত্র গবেষক ফাহমিদুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সিলেটের মেয়ে খাদিজা যে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে, এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি। এই হিংসা আমাদের দেশের মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নয়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কৃতিমনস্ক। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘চলচ্চিত্রের জগতে আমরা বিশ্বের কাতারে নিজেদের স্থান করে নিতে চাই। আমাদের নির্মাতাদের সেই যোগ্যতা রয়েছে, তার সন্দেহ নেই। কেননা, আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মূল প্রেরণা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ। দেশকে ভালোবেসে, হৃদয়ে ধারণ করে কোনো কাজ করলে, তা সফলতার শীর্ষে উঠবে।’
সমাপনী আয়োজনে নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উভয় বিভাগে দেওয়া হয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ও জুরি বিভাগের মনোনীত বিশেষ পুরস্কার। এ আয়োজনে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে মো. আবিদ মল্লিক নির্মিত ছবি ‘পথ’। এ বিভাগে ‘দি সুজ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন সাদাত হোসাইন। বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছেন মো. মামুনুর রশীদ নির্মিত ছবি ‘মাটির পাখি’। প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে মকবুল চৌধুরী নির্মিত ছবি ‘নট পেনি নট এ পান’। এ বিভাগে ‘বিষকাঁটা‘ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন ফারজানা ববি। ‘যে গল্পের শেষ নেই’ ছবির জন্য বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছেন ফৌজিয়া খান।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। আয়োজনে স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের উভয় বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য এক লাখ টাকা করে দুজনকে এবং দুই শ্রেষ্ঠ নির্মাতাকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। বিশেষ জুরি পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতাকে দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক ও সনদ। এ ছাড়া উৎসবে অংশগ্রহণকারী সব নির্মাতাকে দেওয়া হয় সনদপত্র।
উৎসবের জন্য বিভিন্ন বিভাগে জমা পড়েছিল গত পাঁচ বছরে নির্মিত ১৩৩টি ছবি। সেগুলোর মধ্যে থেকে বাছাই করে ৩৫টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ২৯টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নির্মিত উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্র থেকে ১১টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ও ৯টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচন করা হয়। সব মিলিয়ে ৮৪টি চলচ্চিত্র এ উৎসবে প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং দেশের ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ, শর্ট ফিল্ম ফোরাম ও প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ।