স্মার্টফোন দিয়ে ১৫ মিনিটেই এইডস নির্ণয়!
স্মার্টফোনেই এইডস ও সিফিলিস পরীক্ষা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন ৩৫ ডলার মূল্যের একটি যন্ত্র। এটি স্মার্টফোনে যুক্ত করে মাত্র এক ফোঁটা রক্ত দিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে রোগ নির্ণয় করা যায়। স্মার্টফোনভিত্তিক যন্ত্রটি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। এরই মধ্যে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় এই যন্ত্রের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে।
এমআইটি টেকনোলজিক্যাল রিভিউ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক স্মার্টফোনভিত্তিক রোগনির্ণয়ের যন্ত্রটি তৈরি করেছেন। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক স্যামুয়েল সিয়া।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স ট্রান্সেলেসন মেডিসিনে’ এ সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা বলেন, স্মার্টফোনভিত্তিক রোগনির্ণয়ের যন্ত্রটি আকৃতিতে প্রায় স্মার্টফোনেরই সমান। প্লাস্টিকের তৈরি সহজেই হাতে বা পকেটে রাখা যায়। যন্ত্রটি চলতে বিদ্যুৎও লাগে সামান্য। এই বিদ্যুতের উৎস স্মার্টফোনের ইয়ারফোনের জ্যাক। গবেষকরা বলেন, একটি আইপ্যাডে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চার্জ থাকে তা দিয়ে যন্ত্রে ৪১টি পরীক্ষা করা সম্ভব। মাত্র এক ফোঁটা রক্ত ব্যবহার করে এটি দ্রুততার সঙ্গে এইডস ও সিফিলিস রোগ নির্ণয় করতে পারে। রোগনির্ণয়ের জন্য যন্ত্রটিতে আলাদা কার্ট্রিজ ব্যবহার করা হয়। একবার রক্ত নিয়ে রোগ পরীক্ষায় খরচ পড়ে এক ডলারেরও কম।
স্মার্টফোনভিত্তিক রোগনির্ণয়ের যন্ত্রটির কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষকরা বলেন, কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এক ফোঁটা রক্ত সংগ্রহ করে কার্ট্রিজের মধ্যে নেওয়া হয়। সেখানে রক্তের নমুনার সঙ্গে রাসায়নিক বস্তু মেশানো হয়। পরে কার্ট্রিজটি যন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। কার্ট্রিজের মধ্যে থাকা স্বর্ণের অতিক্ষুদ্র কণার সঙ্গে অ্যান্টিবডি যুক্ত হয়। আর স্বর্ণের কণার চারপাশে রুপার ক্ষুদ্র কণার প্রলেপ যুক্ত হয়ে ফিল্ম তৈরি করে। এর তথ্য স্মার্টফোনে বিশ্লেষণ করেই এইডস বা সিফিলিস রোগ আছে কি না জানা যায়। রোগ বিশ্লেষণের ফলাফল স্মার্টফোনে দেখানো হয়।
গবেষক স্যামুয়েল সিয়া বলেন, অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক পরীক্ষা রোগনির্ণয় পদ্ধতি এলিসা নামে পরিচিত। সাধারণত এই পরীক্ষার জন্য বড় পরীক্ষাগার প্রয়োজন পড়ে। আর এর খরচও অনেক। স্মার্টফোনভিত্তিক রক্ত পরীক্ষা যন্ত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে খরচও যেমন কম, তেমনি প্রয়োজন পড়ে না বড় পরীক্ষাগার।
এর আগেও স্যামুয়েল সিয়া পোস্টিক তন্ত্রের ক্যানসারের গবেষণার যন্ত্র তৈরি করেন। পরে এটি ওপিকেও হেলথ অব মায়ামি বাজারজাত করেন।
কয়েক বছর ধরে গবেষক সিয়ার নেতৃত্বে একদল গবেষক রোগনির্ণয়ের ছোট যন্ত্র তৈরির ও এর কার্যক্রম নিয়ে পরীক্ষা চালান। তাঁরা রোগ পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণের জন্য একটি সফটওয়্যারও তৈরি করেন।
রুয়ান্ডায় স্বাস্থ্যকর্মীরা স্মার্টফোনভিত্তিক রোগনির্ণয়ের যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে ৯৬ জনের মধ্যে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এটি ৯২ থেকে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর বলে প্রমাণিত।
গবেষক সিয়া বলেন, বর্তমানে তারা বড় আকারে পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছেন।