নতুন রেসিপি, সুস্বাদু খাবার রেঁধে দিচ্ছে কম্পিউটার!
খাবারের উপাদানগুলোকে বুঝতে সেগুলোর আনবিক স্তরকে বিবেচনা করেন শেফ ওয়াটসন। তিনি এটাও বোঝেন যে, কোন ধরনের স্বাদযুক্ত খাবারকে একসঙ্গে রান্না করলে সেটা খেতে সুস্বাদু হয়। আর এই বিশেষ জ্ঞানটিই শেফ ওয়াটসনকে অন্য যেকোনো পেশাদার শেফ বা ঘরের রাঁধুনিদের চাইতে আলাদা করে।
ধরুন, আপনার বাসায় বেগুন আছে। আর সেটি দিয়ে আপনার খেতে ইচ্ছা করছে পাস্তা সালাদ। কিন্তু প্রথাগত রেসিপিতে রান্না করতে চান না আপনি। মন চাইছে, অন্য কোনো দেশের রেসিপি চেষ্টা করতে। কিন্তু সেই রেসিপি কোথায় পাবেন?
এই সমস্যার সমাধান করবে শেফ ওয়াটসন। তাকে জানাবেন কী দিয়ে কী খেতে চান। আর সে আপনাকে বলে দেবে এর রেসিপি। কিংবা আপনি চাইলে একেবারে নতুন ধরনের রেসিপিও বাতলে দিতে পারে সে।
এখন আসল কথা বলি। যে শেফ ওয়াটসনের কথা বলা হচ্ছে সে কিন্তু রক্ত মাংসের কোনো মানুষ নয়। এমনকি সে কোনো রোবটও নয়। সে হলো একটি কম্পিউটার সিস্টেম।
আর বিশেষ বোধ সম্পন্ন এই কম্পিউটার সিস্টেম শুধু যে রান্নায় পারদর্শী তাই নয়, এটি বই পড়তে পারে, নিবন্ধ পড়তে পারে। প্রায় সব কাজে পারদর্শী এই কম্পিউটার সিস্টেমকে হিসাবরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই কাজে লাগানো যায়।
শেফ ওয়াটসনকে নিয়ে এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে সিএনএন।
শেফ ওয়াটসন তৈরি প্রকল্পের প্রধান ব্যবস্থাপক ফ্লোরিয়ান পিনেলের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেফ ওয়াটসনের তৈরি করা খাবারের তালিকায় ফিউশন চোখে পড়ার মতো। যেসব উপাদান সচরাচর ব্যবহার করা হয় না সেগুলোই দারুণভাবে ব্যবহার করে খাবারে বৈচিত্র্য আনে এই বিশেষ বোধসম্পন্ন কম্পিউটার সিস্টেম। অন্যভাবে বলা যায়, এই সিস্টেম এমন সব রেসিপি তৈরি করে যার কথা সাধারণভাবে চিন্তাও করা যায় না। এটা মানুষের চাইতে বেশি স্বাধীনভাবে বিভিন্ন রকমের উপাদানকে একসঙ্গে মেশাতে পারে। তা ছাড়া এর ডাটাবেসে ৩০টি দেশের নিজস্ব খাবারের রেসিপি থাকতে পারে।
পিনেল শেফ ওয়াটসনের ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, প্রথমে এই সিস্টেমে আপনি কী দিয়ে খাবার তৈরি করতে চাইছেন তার নাম লিখবেন। এরপর সিস্টেম আপনার কাছে জানতে চাইবে এই উপাদান দিয়ে আপনি কোন ধরনের খাবার চান। এরপর আপনার কাছে জানতে চাওয়া হবে, কোন দেশি খাবার আপনি এটা দিয়ে বানাতে চান। সবকিছু নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পর শেফ ওয়াটসন আপনাকে জানাবে যে মোট কত রকম রেসিপি তার ভাণ্ডারে আছে। সেখান থেকে পছন্দমতো রেসিপিটি আপনাকে বেছে নিতে হবে।
এই সিস্টেম ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো যেকোনো রেসিপি তৈরি করতে ওয়াটসনকে বলতে পারেন। এ ছাড়া কী কী সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে আর কী কী ব্যবহার করা যাবে না সেটাও সেট করে দেওয়া যেতে পারে।
ইনস্টিটিউট অব কুলিনারি এডুকেশনের পরিচালক শেফ জেমস ব্রিসকিওন বলেন, ‘এটির ক্ষমতা আমাকে বিস্মিত করেছে।’
এ ছাড়া কিছুদিন আগে ‘কগনিটিভ কুকিং উইথ শেফ ওয়াটসন’ নামে এই সিস্টেমের বিভিন্ন রেসিপি নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়াটসনের ডাটাবেসে ১০ হাজার মুখরোচক খাবারের রেসিপি আছে। কোন খাবারে কোন উপকরণ কতটুকু ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে নতুন রেসিপি তৈরি করতে হবে এবং কোন কোন উপাদান মেশালে খাবারটির স্বাদ আরো বাড়বে- এ সবই বুঝতে পারে শেফ ওয়াটসন। এমনকি রান্না করার যেসব প্রক্রিয়া সাধারণ অনেক সময় ধরে করতে হয় সেটাও সহজে করার পদ্ধতি বলে দিতে পারে ওয়াটসন সিস্টেম।
তবে এই প্রক্রিয়ায় এখনো নানা সংযোজন বিয়োজন হচ্ছে। মাত্র গত বছরই সাধারণ মানুষরা শেফ ওয়াটসনকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। শেফ ওয়াটসনকে আরো উন্নত করতে বিভিন্ন রকমের পরামর্শও চেয়েছেন এর নির্মাতারা।