ইতালিতে করোনা আতঙ্কে সিরি-আর তিন ম্যাচ স্থগিত
করোনাভাইরাসে আশঙ্কাজনকভাবেই ভুগতে শুরু করেছে ইতালি। শুরুতে ধীরে ধীরে এ ভাইরাস ছড়ালেও এখন তা বেড়েই চলছে দেশটিতে। এরই মধ্যে এ ভাইরাসে ইতালিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ জনে।
এদিকে, ইতালিতে করোনা আতঙ্কে জনপ্রিয় ফুটবল লিগ সিরি-আর তিনটি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। ম্যাচ তিনটি ইতালির লমবার্ডি ও ভেনেতো অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
স্থগিত হওয়া তিনটি ম্যাচ হলো ইন্টার মিলান বনাম সাম্পদোরিয়া, আতলান্তা বনাম সাসুওলো ও হেলাস ভেরোনা বনাম কাগলিয়ারি।
এ ছাড়া আজ রোববার জেনোয়া, তুরিন ও রোমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তিনটি ম্যাচ বাতিল করা হয়নি।
এদিকে ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে লমবার্ডি অঞ্চলে ৩৯ জন, ভেনেতো অঞ্চলের ১২ জন ও রোমের তিনজন রয়েছেন।
ইতালিতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে যেকোনো ধরনের জনসমাগমস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশটিতে একের পর এক মানুষ ধরাশায়ী হচ্ছেন রোগটিতে। ছড়িয়ে পড়ছে এক শহর থেকে অন্য শহরে। একাধিক শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে সারা দেশের।
এরই মধ্যে ইতালির উত্তরাঞ্চলের ১০টিরও বেশি শহর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই শহরগুলোর জনসমাগম স্থানগুলোতে সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতালিতে অবরুদ্ধ হওয়া শহরগুলোতে বসবাস করা মানুষের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাঁদের নিজেদের বাড়িঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্কুল, পানশালা, গির্জা ও খেলাধুলার স্থানসহ বিভিন্ন জনসমাবেশস্থলে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে পৃথিবীজুড়ে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ রোববার চীনে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৪০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৭ হাজার। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, চীনে আগের তুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমলেও দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালি ও রোমানিয়ায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। রোগটির লক্ষণ অন্যদিকে মোড় নিয়েছে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকরা। যা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
জানা গেছে, কোভিড-১৯ নিয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছেন চীনের চিকিৎসকরা। ২০ বছর বয়সী এক তরুণী কোনো রকম লক্ষণ ছাড়াই উহান থেকে কমপক্ষে ৪০০ মাইল দূরের একটি শহরে যাওয়ার পর তাঁর দ্বারা পরিবারের পাঁচজন রোগটিতে আক্রান্ত হন। পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, রোগটি নতুন নতুন লক্ষণ নিয়ে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে, যা আরো প্রাণঘাতী হতে পারে।
রোগটি যাতে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু রোগটি আর কোনো একটি দেশের মানচিত্রে সীমাবদ্ধ নেই, তাই এ মুহূর্তে চীনের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করা উচিত নয় বলে মনে করেন তাঁরা।
চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগ জিলিয়ান বলেন, ‘একাত্মতাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। অবশ্যই এমন কিছু আছে, যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হতে পারে। তবে সময়টা মোটেই সেসব নিয়ে কথা বলার জন্য উপযুক্ত নয়। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত এবং চীনের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়, সেটাই ভাবাচ্ছে আমাদের।’
করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাল্টে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অবহিত আছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম জানান, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন তাঁরা।