তাঁবুর শহর মিনায় চলছে হজের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

আসন্ন পবিত্র হজকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে তাঁবুর শহর সৌদি আরবের মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায়। মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার মধ্যে মিনা অবস্থিত। হজের সময় এখানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জড়ো হন। এরই মধ্যে এসব স্থানে হজের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
সম্প্রতি মক্কা অঞ্চলের ডেপুটি আমির প্রিন্স সৌদ বিন মিশাল বিন আবদুল আজিজ মিনা আরাফাত, মুজদালিফা ও মিনা হাসপাতাল প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
এবারও মক্কায় হজযাত্রীদের জন্য আরও উন্নত মানের এবং নিরাপদ রাস্তা তৈরি করেছে সৌদিআরব কর্তৃপক্ষ। রাবারের ফ্লেক্সিবল রোড সেফটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়কগুলো প্রশস্ত করার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। হজযাত্রীদের জন্য রাস্তার পরিমাণ ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ হাজার বর্গমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যা নামিরা মসজিদ থেকে আরাফাতের আল-মাশায়ের ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত।
৭ জিলহজ মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ জন্য মিনায় অবস্থিত তাঁবুগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মেরামতের কাজ দ্রুত চলছে। হজযাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে তাঁবুগুলোর এয়ার কন্ডিশনিং, ফায়ার সেফটি সিস্টেমসহ অন্য বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাঁবু পরিষ্কার, বর্ডার স্থাপন এবং বৈদ্যুতিক তারের পাশাপাশি প্লাম্বিংয়ের কাজ চলমান। তাঁবুর টয়লেট এবং বাথরুমগুলোও মেরামত করা হচ্ছে এবং সেখানে পানির লাইনগুলোতে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁবু পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ শেষ হলেই সেখানে বিছানা ও কার্পেট পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা হজযাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন। যেন হজের দিনগুলোতে মুসল্লিরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে অবস্থান করতে পারেন।
এক সময় মিনায় অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করা হতো। এরও আগে হজযাত্রীরা হজে আসার সময় সঙ্গে করে নিজেদের থাকার উপযোগী তাঁবু বা অন্য সরঞ্জাম নিয়ে আসতেন। ১৯৯৭ সালে মিনায় ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ৩৫০ হজযাত্রী নিহত হন। এ ঘটনার পর সৌদি সরকার মিনায় স্থায়ীভাবে অগ্নিরোধী তাঁবু স্থাপন করে। তাঁবুগুলোতে পানি সরবরাহের পাশাপাশি অ্যালার্ম, বৈদ্যুতিক আউটলেট, রান্নাঘর, বাথরুমসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা স্থাপন করা হয়। সাধারণত হজের দুদিন আগে মিনা এলাকার গেট খুলে দেওয়া হয়। হজের দুদিন পর আবার সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। হজের এ পাঁচ দিন ছাড়া মিনার পুরো এলাকা সারা বছর খালি পড়ে থাকে। চারপাশের গেটগুলোও তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৈদ্যুতিক সংযোগ, পানির লাইন, টেলিফোন সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

হজের নিয়ম অনুযায়ী ১০ জিলহজ হাজিরা মিনায় শয়তানকে পাথর ছোড়েন, কোরবানি দেন, মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করেন।
এদিকে হজযাত্রীদের উন্নতমানের সেবা দিতে ইতোমধ্যে মক্কা পৌরসভা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির হজ পালন করার কথা রয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।