সম্প্রীতির নিদর্শন নড়াইলের মহিষখোলা
শারদীয় দুর্গোৎসবে মন্দিরে চলছে পূজার মন্ত্রপাঠ। মন্দিরের পাশেই মসজিদ। নামাজের সময় হলেই প্রতিবেশি মুসলিমদের জন্য এনে দেওয়া হচ্ছে নিরবতা। চলছে নামাজ। এভাবেই নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলায় পাশাপাশি যার যার ধর্ম পালন করছেন হিন্দু-মুসলিমরা। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
জানা গেছে, প্রায় অর্ধশত বছর আগে পুরাতন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর ১০ বছর পর মহিষখোলা সার্বজনীন পূজামণ্ডপটি তৈরি করা হয়। তারপর থেকে এখানে সম্প্রীতি বজায় রেখেই যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন স্থানীয়রা।
এ এলাকার মানুষের মধ্যে নেই কোনো হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ। গত ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব বয়সের লোকজন ধর্মীয় আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। আগামীকাল বুধবার দেবী দুর্গা ফিরবেন কৈলাশে। শেষ হবে এলকার এই মন্দিরে দুর্গোৎসব। তবে থেকে যাবে এতদিনের চলে আসা সম্প্রীতির বন্ধন।
মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা কমিটি সভাপতি সুমন দাস বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে এলাকায় বসবাস করি। আমাদের এলাকায় কখনও ধর্ম নিয়ে কোনো বিরোধ বা বাড়াবাড়ি নেই। এই এলাকার মানুষ মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যকেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
সুমন দাস আরও বলেন, ‘পূজা উদযাপনের সময় সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাল পেয়ে থাকি। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সহযোগিতা করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ খরচের ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করে থাকি।’
নড়াইল পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা এনামুল হক বলেন, ‘আমরা মন্দির কমিটিকে নামাজের সময়সূচি জানিয়েছি। নামাজের সময় মন্দির কমিটি তাদের কার্যক্রম শিথিল রাখেন। নামাজ শেষে স্বাভাবিক নিয়মেই পূজা-র্অচনার কাজ চলে। আমাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত নেই। বহু বছর ধরে আমরা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে একই সমাজের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি।’
নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন কমটিরি সভাপতি অশোক কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘এ বছর জেলার তিনটি উপজেলায় ৫৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি, প্রতি বছরের মতো এ বছরও নড়াইলে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।’
পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন বলেন, ‘নড়াইলে মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে দুর্গাপূজাসহ সব উৎসব উদযাপনের ইতিহাস সুদীর্ঘ কালের। করোনার কারণে গত দুই বছর দুর্গাপূজা উদযাপন সেভাবে হয়নি। তবে এবারে জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।’