নারীদের হাত ধরেই ফুটবলে নবজাগরণ

শেষ বাঁশিটা বাজতেই পুরো গ্যালারি আনন্দে ফেটে পড়ল। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আনন্দটা চলল অনেকক্ষণ ধরেই। আর সেটা হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়? ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দেশের ফুটবলে অনেক দিন ধরেই আনন্দের কোনো সংবাদ নেই। শেষ পর্যন্ত কিশোরীদের হাত ধরেই এলো বহু প্রতীক্ষিত সেই সাফল্য। শামসুন্নাহার-মারিয়া-আঁখিদের এমন সাফল্যে উদ্বেলিত গোটা দেশ। সাবাস বাংলাদেশ।
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামটার কথা জানেন না, বাংলাদেশে এমন ক্রীড়াপ্রেমী খুব বেশি একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এই গ্রামের অদম্য কয়েকজন কিশোরীই দেশের ফুটবলকে এনে দিয়েছে সর্বোচ্চ সফলতা। ২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দলের ১০ জনই ছিল এই গ্রামের মেয়ে। গত বছর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব মাতিয়েছে এখানকার মেয়েরা। ইরান, চায়নিজ তাইপের মতো দেশগুলোকে মাটিতে নামিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে জায়গা করে নেয় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে। এবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ দলেও রয়েছে এই গ্রামের সাহসী কয়েকজন কিশোরী। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোকে হারিয়ে শিরোপাটাও বগলগাদা করল বাংলাদেশের সোনার মেয়েরা।
টানা তিন মাস অনুশীলন করছে শামসুন নাহার, নাজমা, আঁখি, মনিকা, তহুরা, মারজিয়া, নিলা, মারিয়ারা। গত পাঁচ দিনে তিনটি বড় খেলেছে মেয়েরা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগের দলটির ক্লান্ত হওয়ারই কথা ছিল, তবে মাঠে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ভারতের মেয়েদের কোনো সুযোগই দেয়নি বাঘিনীরা।
রোববার ফাইনাল ম্যাচে পুরো আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে টাইগার-কন্যারা। ম্যাচের শুরু থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকে তারা। ভালো খেলার পুরস্কারটা প্রথমার্ধেই পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪২ মিনিটে জটলা থেকে লক্ষ্যভেদ করে শামসুন্নাহার। দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল আঁখি-তহুরারা। তবে লক্ষ্যভেদ করা হয়নি। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই এক গোলের ব্যবধানটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে বাঘিনীরা।
দেশকে অনেকবারই আনন্দের উপলক্ষ এনে দিলেও ছোট্ট এই ফুটবলারদের জীবনটা কিন্তু অনেক কষ্টের। ধোবাউড়া উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় কলসিন্দুর গ্রামে। ময়মনসিংহ থেকে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। অজপাড়াগাঁওয়ের এই মেয়েরা বেড়ে উঠেছে অনাদরে। পরিবার-পরিজনদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই তাদের দিন কাটাতে হয়েছে অনাহারে-অর্ধাহারে। তবে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাদের সামনে।
বাংলাদেশের ফুটবলে এখন চলছে নবজাগরণ। আর সেটা এসেছে নারীদের হাত ধরে। ফিফা র্যাংকিংয়ে দ্রুতই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ নারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে সেরা ১০০-তে উঠে এসেছে শামুসন্নাহারদের অগ্রজরা। ফুটবলে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সাফল্য এটি। ভিন্ন চিত্র পুরুষদের র্যাংকিংয়ে। ২০৬টি দেশের মধ্যে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। বলা বাহুল্য, দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে নারীরা। বয়সভিত্তিক দল থেকে থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীদের সাফল্য ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে। অনেক হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে এই মেয়েরা। জয়তু অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দল।