শুরুটা রিয়াল-রোনালদোর, শেষটা বার্সা-মেসির

দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে এলো ২০১৭ সাল। গেল বছরের হিসাবনিকাশে ব্যস্ত পুরো বিশ্ব। ক্রীড়াঙ্গনেও চলছে বছরের চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই বছরে ক্রীড়া বিশ্বে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের ধারাবাহিক সালতামামিতে আজ থাকছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের খবর।
রিয়ালের সব পাওয়ার বছর
২০১১-১২ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ শেষবারের মতো জিতেছিল লা লিগার শিরোপা। এরপর গত পাঁচ বছরে অনেক শিরোপাই উঠেছে রিয়ালের ট্রফিকেসে। দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ, একবার কোপা দেল রে। উয়েফা সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ- কোনো শিরোপাই বাদ যায়নি। আক্ষেপ ছিল শুধু লা লিগা নিয়ে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা আর নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদ এই পাঁচ বছর শুধু হতাশই করেছে স্পেনের সফলতম এই ক্লাবটিকে। তবে এবারের মৌসুমে সেই আক্ষেপ দারুণভাবে ঘুচিয়ে দিয়েছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। জিতে নিয়েছে লা লিগার শিরোপা।
গত চারটি মৌসুমের তিনবারই লা লিগা শিরোপা জিতেছিল বার্সেলোনা। দ্বিতীয় স্থানে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এবার সেই সমীকরণটি উল্টে দেয় তারা। লা লিগার শেষ ম্যাচে মালাগার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় দিয়ে হতাশ করেছে বার্সেলোনাকে। ৩৮ ম্যাচ শেষে ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জিতেছে রিয়াল। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা বার্সার সংগ্রহ ছিল ৯০ পয়েন্ট।
লা লিগা জয়ের সময় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের হাতছানিও ছিল রিয়াল মাদ্রিদের সামনে। জুভেন্টাসকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা দুবার ইউরোপ সেরার ট্রফি উঁচিয়ে ধরে রোনালদোরা। রিয়ালের এটি ১২তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়। ইউরোপ সেরার তিনটি আসরের ফাইনালে গোল করা একমাত্র ফুটবলার হওয়ার গৌরবটাও রোনালদোর পকেটে। এই ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন লিগে ৫০০ গোল করা একমাত্র ক্লাব হয় রিয়াল মাদ্রিদ।
এই মৌসুমে ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপাটাও গেছে রিয়ালের দখলে। ফাইনালে ব্রাজিলের ক্লাব জের্মিওকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে লস ব্লাঙ্কোসরা। এত দিন সবচেয়ে বেশি তিনটি ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের রেকর্ড এককভাবেই ছিল বার্সেলোনার দখলে। এবার সেই রেকর্ডে হানা দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
রোনালদোর পঞ্চম ব্যালন ডি’অর
লিওনেল মেসিকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবারের ব্যালন ডি’অর জিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে ধরে ফেললেন রোনালদো। এর আগে পাঁচবার ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই ট্রফিটি জেতেন মেসি। এবার চিরপ্রতিদ্ন্দ্বীকে ছুঁয়ে ফেললেন সিআরসেভেন। গত মৌসুমে রিয়ালের হয়ে লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জেতেন রোনালদো।
পিএসজিতে নেইমার
বছরে মাঝ সময়টা ছিল নেইমারের দখলে। বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনে যোগ দেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। নেইমারের দলবদলের পুরোটা জুড়ে ছিল নাটক। শেষ পর্যন্ত সকল নাটকের অবসান ঘটিয়ে ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পিএসজিতে যোগ দেন ব্রাজিল তারকা। ২০১৫ সালে রেকর্ড ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে পল পগবাকে ভেড়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে সবার চক্ষু চড়কগাছ করে পগবার প্রায় দ্বিগুণ দামে নেইমারকে কিনে নেয় পিএসজি।
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ঈন্দ্রপতন
আগামী বছর রাশিয়াতে বসছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। তবে শুরুর আগেই কিছুটা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে আসরটি। কারণ বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে ইউরোপীয় ফুটবলে পাওয়ার হাউস খ্যাত নেদারল্যান্ডস ও ইতালি। ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ছাড়াই হবে বিশ্বকাপ। ২০০২ সালের পর প্রথম বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। এর আগে গত বছর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলতে পারেনি কমলা জার্সিধারীরা। বিশ্বকাপে নেই কোপা আমেরিকা বিজয়ী চিলিও।
মেসি জাদুতে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা
হারলেই বাদ এমনকি ড্র করলেও ঝুলে যাবে ভাগ্য। শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করতে আর্জেন্টিনার সামনে জয়ের বিকল্প আর কিছু ছিল না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ইকুয়েডরের রাজধানী কিটো দুই হাজার ৮৫০ মিটার উঁচুতে। ২০০১ সালের পর থেকে এই ভেন্যুতে ইকুয়েডরকে হারাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। এবার পারবে তো? এমন ম্যাচের মাত্র ৪০ সেকেন্ডে গোল করে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাঁদিয়ে ছাড়ে ইকুয়েডর! তাহলে কি আর্জেন্টিনা ও মেসিকে ছাড়াই হবে বিশ্বকাপ? না, এই গ্রহের নিখুঁত ফুটবলার মেসি সেটা হতে দেবেন কেন? হ্যাটট্রিক করে দলকে একাই বিশ্বকাপে তুলে দেন ফুটবল বিস্ময়।
বছরের শেষটা বার্সার
গত মৌসুমে প্রায় সব কিছুই জিতে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। এই মৌসুমে তাই শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর ছিল বার্সেলোনা। লা লিগার এখনো অর্ধেক বাকি। তবে এরই মধ্যে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এবারের লা লিগা বিজয়ী। বছরের শেষ ম্যাচে লা লিগার ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বার্সেলোনা। লিগে রিয়ালের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট এগিয়ে গেছে বার্সেলোনা। ১৭ ম্যাচে বার্সার সংগ্রহ ৪৫ পয়েন্ট। এক ম্যাচ কম খেলে রিয়ালের সংগ্রহ মাত্র ৩১! কাকতালীয় কিছু না ঘটলে এবার লা লিগার শিরোপাটা বার্সার ঘরেই যাচ্ছে। লা লিগায় এবার শুরু থেকেই আগ্রাসী মেসি। এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ১৫ গোল। সংখ্যার বিচারে তার ধারেকাছেও কেউ নেই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো করেছেন মাত্র ৪ গোল!
হ্যারি কেন ঝড়
কয়েক বছর ধরে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রাজত্ব। তবে এই বছর আর তেমনটা হলো না। মেসি-রোনালদোরদের রাজত্বে হানা দিলেন টটেনহাম তারকা হ্যারি কেন। ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হলেন কেন। বছরের শেষ লিগ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে গোলসংখ্যাটা ৫৬-তে নিয়ে গেলেন টটেনহাম সুপারস্টার। এ বছর ৬৪ ম্যাচে ৫৪টি গোল করেছেন মেসি। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন রোনালদো, রবার্ট লেভানডভস্কি ও এডিনসন কাভানি। তিনজনই ৫৩টি করে গোল করেছেন। প্রিমিয়ার লিগের এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা এখন কেনের। এই বছর ৩৯ গোল করেছেন এই গোল মেশিন।