মেসি কি পারবেন ম্যারাডোনা হতে?

বনেগা গোল এসিস্ট না করেও রেটিং ৯ উঠাতে পারে, পাস ১৩৯! আগুয়েরো বেঞ্চ থেকে নেমেই গোল করেন। ওটামেন্ডি না থাকা সিটির ডিফেন্স দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ইকার্দি সিরি ‘এ’ লিগে, ডিবালা-হিগুয়েন জুভেন্টাসের টপ স্কোরার। ডি মারিয়াও সুযোগ পেলে বল জালে জাড়ান।
এঁদের আসলে ক্লাব ছেড়ে আর্জেন্টিনার জার্সিটা পড়লে কী হয়? আর্জেন্টিনা দলে অনেক তারকা ফুটবলার আছেন, কিন্তু জাতীয় দলে তারা নিজেদের সেরাটা দেখাতে ব্যর্থ হন। যার ফলে পুরো চাপটা এসে পড়ে মেসির কাঁধে। মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে আর্জেন্টিনা সাতটি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয় একটি, হার দুটি, বাকি চার ম্যাচে ড্র! আর মেসিসহ খেলেছে ছয় ম্যাচে। এর মধ্যে পাঁচ ম্যাচে জয়, হার এক ম্যাচে! সহজেই অনুমেয়, মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা কতটা দল দুর্বল।
এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে দলকে রীতিমতো তলানি থেকে তুলতে হয়েছে। ইকুয়েডরের সঙ্গে ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিক না হলে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের দর্শক হয়েই হয়তো কাটিয়ে দিতে হতো। ১৯৭০ সালের পর এই প্রথম এতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা মূল পর্ব নিশ্চিত করে। ইউরোপিয়ান লিগে দাপিয়ে বেড়ানো তারকা ফুটবলারদের কাছে রাশিয়ার টিকেট পাইয়ে দেওয়াটাকে তারা ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবেই বিবেচনা করে।
যে দেশে ফুটবল একটা ধর্ম, সে দেশে মেসির মতো গ্রেট ফুটবলার দেশের লোকের কাছে পূজনীয় নয়। মেসির চারটি ইউরোপিয়ান কাপ, আটটি লিগ টাইটেল, তিনটি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, পাঁচটি ব্যালন ডি'অর জিতেছেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো না। স্বাভাবিক কারণে ক্লাবের সাফল্য দিয়ে জাতীয় দলের সমর্থকদের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভিন্ন দেশের ভিন্ন ক্লাবের সফলতার মাধ্যমে মেসি যদি পৃথিবীর সেরা ফুটবলারও হন, কিন্তু জাতীয় দলে সফল হতে না পারেন, তবে সমর্থকদের কাছে সে ভালোবাসা নাও পেতে পারেন।
গত তিন বছরে টানা তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে প্রতিবারই আর্জেন্টিনাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে শিরোপা হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। পরের দুই বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে টাইব্রেকারে হারে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এবারের বিশ্বকাপ মেসির জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। এটাই মেসির শেষ সুযোগ বিশ্বকাপ জিতে জাতীয় বীরের রূপকথা লেখার! রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘ডি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনাকে লড়তে হবে আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে।
কোচ সাম্পাওলির অধীনে আর্জেন্টিনার উন্নতি তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। আর্জেন্টাইন এই কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত আট ম্যাচ খেলে চারটিতে জয় পেয়েছে। তাই রাশিয়ায় শিরোপা লড়াইয়ে থাকতে হলে দলের আরো দ্রুত উন্নতির তাগিদ দিলেন মেসি, ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চাইলে আমাদের আরো উন্নতি করতে হবে। বর্তমানে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে কিছুটা দূরে আছি। কিন্তু আমাদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য সময় আছে।’
সময় বাকি নেই খুব বেশি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হবে ২৬ মে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ আইসল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৫ জুন। এই অল্প সময়ে সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়াটা কেমন হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে! প্রতিটি ম্যাচে মেসির ভূমিকা হতে হবে ফিনিশার এবং প্লে-মেকারের। মেসি যদি ৯০ মিনিট স্ট্রাইকে থাকেন, তবে আর্জেন্টিনার জয়ের সম্ভাবনা আছে। পুরো টিম মেসিকে সহযোগিতা করলে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার ঘরেই শোভা পাবে।
আর্জেন্টাইনদের কাছে পরিসংখ্যান একটাই, ম্যারাডোনা ১-০ মেসি! ম্যারাডোনা যে কাজটি ১৯৮৬ সালে করেছিলেন, ঠিক একই কাজের পুনরাবৃত্তি ২০১৮ সালে ঘটলেই যে দেশে ফুটবলটাই ধর্ম, সে দেশে মেসিই হবেন ফুটবলের ঈশ্বর!