১০১ বছর ধরে চলছে যে লড়াই!
আন্তনিও পিয়াজ্জিওর নাম হয়তো খুব বেশি মানুষ শোনেনি। আর্জেন্টাইন এই মিডফিল্ডার এমন কোনো কীর্তিও গড়েননি, যার জন্য তাঁকে মনে রাখবে ফুটবল-বিশ্ব। কিন্তু ১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পিয়াজ্জিওর ছোট্ট একটি টোকায় শুরু হয়েছিল এক রোমাঞ্চকর লড়াই। ১০১ বছর পরও যা বিন্দুমাত্র রং হারায়নি। দুই প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল-দ্বৈরথ একশ বছর অতিক্রম করেও আজো উত্তেজনায় ভরপুর; বরং দিন দিন বেড়ে চলেছে উত্তেজনার পারদ।
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীরা আবারো পেতে যাচ্ছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জমজমাট লড়াইয়ের রোমাঞ্চ। এটি হবে দুই ফুটবল-পরাশক্তির ১০২তম লড়াই। কেন দুই ফুটবলপাগল দেশের লড়াই এতটা রোমাঞ্চকর, তা বোঝা যাবে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে। আগের ১০১টি মুখোমুখি লড়াইয়ে ব্রাজিল জিতেছে ৩৯টি, আর্জেন্টিনা ৩৭টি, ড্র হয়েছে বাকি ২৫ ম্যাচ। জয়ের হিসাবে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও গোলসংখ্যায় একই বিন্দুতে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা একে অন্যের জালে বল জড়িয়েছে সমান ১৫৮ বার।
ব্রাজিলের বেশ আগে ফুটবলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনায়। ১৮৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন যাত্রা শুরু করেছিল তার ২১ বছর পর ১৯১৪ সালে। সে বছরই আর্জেন্টিনার কাছ থেকে লড়াইয়ের প্রস্তাব পেয়েছিল ব্রাজিল। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ব্রাজিলকে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুলিও আন্তনিও রোকা। তাঁর নামানুসারে প্রতিযোগিতার নাম রাখা হয়েছিল কোপা হুলিও রোকা।
কিন্তু ব্রাজিলের ফুটবলারদের বহন করা জাহাজ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে পৌঁছাতে দেরি করায় কোপা হুলিও রোকা নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারেনি। তার আগে ২০ সেপ্টেম্বর একটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। প্রথম মুখোমুখি লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-০ গোলে। তবে সেই হারের ‘প্রতিশোধ’ নিতে দেরি করেনি ব্রাজিল। ঠিক এক সপ্তাহ পর, ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বুয়েনস আইরেসের একই মাঠে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ‘সেলেসাও’রা জিতে নিয়েছিল কোপা হুলিও রোকা। সূচনালগ্নে যে জমজমাট দ্বৈরথের আভাস মিলেছিল, তা শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে ক্রীড়াবিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় লড়াইয়ে।
শুধু দলগতভাবে নয়, দুই দলের তারকা ফুটবলারদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ফুটবল-বিশ্ব। অ্যাঞ্জেল লাব্রুনা নাকি জিজিনিয়ো, কার্লোস পেউসেইয়ে নাকি লিওনিদাস দা সিলভা, আন্তনিও সাস্ত্রে নাকি হেলেনো দি ফ্রেইতাস, মানুয়েল মোরেনো নাকি দিদি, আলফ্রেদো দি স্তেফানো নাকি গ্যারিঞ্চা, মারিও কেম্পেস নাকি জিকো—আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের এই কিংবদন্তিদের মধ্যে কে সেরা, তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। পেলে-ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তর্ক-বিতর্ককে বাইরে রাখাই ভালো। গত শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের পুরস্কার কার হাতে তুলে দেওয়া ঠিক হবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে শেষমেশ তা দুজনকে যৌথভাবে দিয়েছিল ফিফা। পূর্বসূরিদের লড়াইয়ের ঐতিহ্য এখন বহন করে চলেছেন মেসি-নেইমার।
১০১ বছরে অনেক স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিয়েছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। সেসব ম্যাচ ফুটবল-ইতিহাসেও চিরস্থায়ী হয়ে আছে। লাতিন আমেরিকার সেরা ফুটবল প্রতিযোগিতার শিরোপা-সংখ্যায় ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকার শিরোপা আকাশি-সাদাদের ঘরে গেছে ১৪ বার। অন্যদিকে ব্রাজিল জিতেছে আটবার। তবে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে ব্রাজিল। ফুটবলের মহাযজ্ঞে পেলের দেশ শিরোপা জিতেছে পাঁচবার। ম্যারাডোনার দেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার।