সেই ‘বিতর্কিত’ গোল নিয়ে আজো সরব জার্মানি
কালের পরিক্রমায় ৫০ বছর নেহাত কম সময় নয়। ফুটবল দুনিয়ায় এই দীর্ঘ সময়ে কত কিছুই না ঘটেছে। কত উত্থান-পতন, কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই গোলের কথা আজো ভোলেনি জার্মানি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের ‘বিতর্কিত’ গোলটি নিয়ে এখনো তারা সরব। আগামীকাল শনিবার ওই ম্যাচের ৫০তম বার্ষিকী বিতর্কের আগুনকে উসকে দিয়েছে আবারও।
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? ইংল্যান্ড-পশ্চিম জার্মানির ফাইনালে যা হয়েছিল, নিঃসন্দেহে তা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়। লন্ডনের ওয়েম্বলিতে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর খেলা গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। বিতর্কিত গোলটির জন্ম ১০১ মিনিটের সময়। ডান দিক থেকে আসা ক্রস ধরে বক্সের ভেতর থেকে শট নিয়েছিলেন হার্স্ট। বল ক্রসবারের ভেতরের দিকে লেগে গোললাইনে পড়ে ফিরে এসেছিল মাঠে। লাইন্সম্যানের সঙ্গে কথা বলে সুইস রেফারি গটফ্রিড ডিন্সট গোলের বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় শোরগোল।
শেষ বাঁশির ঠিক আগে আরেকটি গোল করে হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেছিলেন হার্স্ট। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার একমাত্র কৃতিত্ব তাঁরই। এরপর বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দূরের কথা, কখনো ফাইনালেও উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড।
আজ ৭৯ বছরে দাঁড়িয়েও সেদিনের স্মৃতি উজ্জ্বল উভা জিলার মনে। বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা জিলার স্মৃতিচারণ, ‘আমি বক্সের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছিলাম। স্পষ্ট দেখলাম, বল লাইন ক্রস করেনি। গোলের বাঁশি বাজার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলাম আমরা। আমাদের কেউ বুঝতেই পারছিল না, কী হতে যাচ্ছে। পশ্চিম জার্মানি দলের কেউ বুঝতেই পারেনি, কেন গোলটা দেওয়া হয়েছিল।’
১৯৯৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডিন্সট সব সময় স্বীকার করে গেছেন, বলটা লাইন ক্রস করেছিল কি না, তা নিয়ে কোনো ধারণা নেই তাঁর। এমনকি আত্মজীবনীতে হার্স্ট নিজেও জানিয়েছেন যে সেদিন সম্ভবত জার্মানরাই সঠিক ছিল।
পরে অবশ্য তিক্ততা ভুলে এ নিয়ে মজাই করতেন জিলা। ইংল্যান্ডের ১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলে ঘটনাটা নিয়ে হাসাহাসি করতেন তিনি, ‘জিওফ (হার্স্ট) বা ববি (মুর) অথবা জ্যাকির (চার্লটন) সঙ্গে দেখা হলে ওই গোল নিয়ে আমরা হাসি-তামাশা করতাম। আসলে ওরাও জানত, বল পোস্টের ভেতরে ঢোকেনি। ওরা তো ঘটনাটা দেখেছিল।’
জিলা বা তাঁর সতীর্থরা হয়তো ‘ক্ষমা’ করে দিয়েছেন রেফারিকে। কিন্তু জার্মান জাতি ঘটনাটা ভুলতে পারেনি। ডর্টমুন্ডে জার্মান ফুটবল জাদুঘর ওই ঘটনা নিয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছে, যার শিরোনাম ‘ফিফটি ইয়ার্স ওয়েম্বলি—দ্য মিথস ইন স্ন্যাপশটস’। আগামীকাল শুরু হয়ে এ প্রদর্শনী চলবে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।

স্পোর্টস ডেস্ক