টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : ঘরই যখন পর
হোম গ্রাউন্ড অ্যাডভান্টেজ—বিশ্বের যে কোনো খেলায় খুব পরিচিত একটি বাক্য। বাংলাদেশের কথাই ধরুন না, নিজেদের মাঠে বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলোকে নাস্তানাবুঁদ করে ছেড়েছে। সেই দলটা আবার বাইরে গেলে বড্ড অচেনা।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের যে কোনো দলই হোম গ্রাউন্ডের সুবিধা নিয়ে থাকে। রিয়াল মাদ্রিদের ভেন্যু নিয়ে যেমন বলা হয়—সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৯০ মিনিট প্রতিপক্ষের জন্য অনেক লম্বা। আবার অ্যানফিল্ডও তেমন প্রতিপক্ষের জন্য মৃত্যুকূপ। জার্মানদের ডেরা নিয়েও একই গল্প। যে কোনো দলের জন্যই ঘরের মাঠে খেলা মানে ভক্তদের সাপোর্ট থেকে শুরু করে চেনা মঞ্চে মাতানোর বড় সুযোগ।
কিন্তু, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এই ধারণাটি পুরোই বদলে দিয়েছে। বরং ক্রিকেটের সীমিত ওভারের এই ফরম্যাটে—ঘরই যেন হয়ে উঠেছে পর!
চলনু খুলে বলা যাক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আয়োজক দেশ একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এমনকি ভারত-অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো টি-টোয়েন্টি মাতানো দলগুলোকে ‘হোম গ্রাউন্ড অ্যাডভান্টেজ’ নীতি দেখিয়েছে বুড়ো আঙুল। বিশ্বকাপের গত আট আসরের পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলছে।
চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক—
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ : ২০০৭ সালে প্রথমবার আয়োজিত হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেবার আয়োজক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু, নিজেদের হোম ভেন্যুতে মেগা টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালেও যেতে পারেনি স্বাগতিকরা। সুপার এইট থেকে বিদায় নিতে হয় প্রোটিয়াদের। জোহানেসবার্গে প্রোটিয়া দর্শকদের সামনে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত।
২০০৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর বসে ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। ঘরের মাঠে তারাও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে পারেনি। ইংল্যান্ডের মাটিতে শেষ চারে খেলে—পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৯ সালের ২১ জুন লর্ডসের মেগা ফাইনালে লড়াই করে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। ইউনিস খানের নেতৃত্বে সেবার ৮ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
২০১০ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ : ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পরের বছরই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মজার ব্যাপার হলো, নিজেদের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজও পারেনি শেষ চারে যেতে। বার্বাডোজে হওয়া ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে অস্ট্রেলিয়া।
২০১২ সালের শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ আসর বসে শ্রীলঙ্কায়। বলাবাহুল্য এই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেনি লঙ্কানরা। কলম্বোর প্রেমেদাসা স্টেডিয়ামে সেবার লঙ্কানদের কাঁদিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের স্বাদ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২০১৪ সালের বাংলাদেশ বিশ্বকাপ : বাংলাদেশের মাটিতে বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসে ২০১৪ সালে। ঘরের মাঠে যেই বাংলাদেশ দুর্দান্ত সেই বাংলাদেশের জন্যই বিশ্বকাপ হয় হতাশায় মোড়ানো। প্রথমত বাছাইপর্বে হংকংয়ের কাছে দুই উইকেটের ব্যবধানে হারের লজ্জায় ডোবে স্বাগতিকরা। এরপর মূল পর্বে উঠলেও চার ম্যাচের চারটিতেই হারে টাইগাররা। মিরপুর শেরেবাংলায় সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।
২০১৬ সালে ভারত বিশ্বকাপ : ঘরের মাঠে ভারতের আধিপত্যের গল্প বেশ পুরোনো। কিন্তু, সেই ভারতই ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে বনে যায় বিড়াল। নিজেদের মাঠে সেমিফাইনালের লড়াইতেই হেরে যায় তারা। কলকাতায় সেই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ।
২০২১ সালের আরব আমিরাত ও ওমান বিশ্বকাপ : ২০১৬ সালের পর চার বছর বিরতি নিয়ে গড়ায় বিশ্বকাপ। করোনার থাবা এড়িয়ে যৌথ আয়োজক হয় আরব আমিরাত ও ওমান। দুদল যেহেতু ক্রিকেটের পরিসীমায় সেভাবে জায়গা নিতে পারেনি এখনে তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রশ্ন অমূলক। এই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে অ্যারন ফিঞ্চের দল।
২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ : সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় ক্যাঙ্গারুর দেশ খ্যাত অস্ট্রেলিয়ায়। এই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালেও পৌঁছাতে পারেনি আগের বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। মাঠভর্তি দর্শকদের সামনে ক্রিকেটের তীর্থস্থান মেলবোর্ন চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টির বিশ্ব মঞ্চে ঘর কেন পর—সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন আশা করি। ক্যারিবীয়দের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের ফাইনাল। এবার কি বদলাবে এই সমীকরণ? নিজেদের মাঠে ক্যারিবীয়রা কি মাতবে শিরোপা উল্লাসে? উত্তর তোলা থাক সময়ের হাতে!