চিটাগংয়ের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে চ্যাম্পিয়ন বরিশাল
পুরো আসরজুড়ে দাপুটে পারফর্ম। তারকা ক্রিকেটার আর অতীত পরিসংখ্যান। স্বাভাবিকভাবে ফাইনাল মহারণে ফেভারিটের তকমা ছিল ফরচুন বরিশালের গায়ে। কীর্তনখোলা নদীর তীরের দর্শকরাও অপেক্ষায় দ্বিতীয় শিরোপা উৎযাপনের জন্য। কিন্তু, শিরোপা মঞ্চে খাজা নাফে ও পারভেজ হোসেন ইমন ঝড়ে ভাজ পড়ে যায় বরিশাল ভক্তদের কপালে। অধিনায়ক তামিম ইকবাল এসে দারুণ ব্যাটিংয়ে মুছে দেন সেই ভাজ। অধিনায়কের বেধে দেওয়া সুরে বাকি গল্প লেখেন কাইল মেয়ার্স ও রিশাদ হোসাইন। ব্যাটারদের দৃঢ়তায় চিটাগং কিংসের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা উঁচিয়ে ধরল ফরচুন বরিশাল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের ফাইনালে চিটাগং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার দেশের ঘরোয়া লিগের শিরোপা জিতল তামিম ইকবালের দল। অন্যদিকে এক যুগ পর ফাইনালে উঠে এবারও শূন্য হাতে বিদায় নিতে হলো বন্দরনগরীর দল চিটাগং কিংসকে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৯৪ রান তোলে চিটাগং। জবাব দিতে নেমে তিন বল হাতে রেখে ১৯৫ রান করে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে তামিম ইকবালের বরিশাল।
১১তম বিপিএল জুড়ে কত কিছুই না ঘটে গেল। তবে বাইরের সব ঘটনাকে একপাশে রেখে বাইশ গজের লড়াই ছিল জমজমাট। ৪০ দিনের ৪৬ ম্যাচের লড়াইয়ে কি ছিল না? রানের বন্যায় চার-ছক্কার ফুল ঝুড়ি, আট সেঞ্চুরি, ব্যাটারদের উইকেটে বোলার রেকর্ড, লোকাল ক্রিকেটারদের জ্বলে ওঠা থেকে গ্যালারি জুড়ে দর্শকদের উৎসব। বিতর্ক বাদ দিয়ে মাঠের ক্রিকেট হিসাব করলে ভালো মার্কসই পাবে বিপিএল।
ফাইনাল জুড়েও ছিল যথেষ্ট উত্তেজনার ছাপ। পুরো টুর্নামেন্টের ছন্দ ধরে রাখা বরিশালের প্রতিপক্ষ বন্দরনগরীর চিটাগং কিংস। ধারেভারে কিংসের চেয়ে এগিয়ে বরিশাল। দলে আছে বাঘা বাঘা নাম। আছে মাঠভর্তী দর্শকদের সাপোর্ট। তাই ফাইনালে সবার বাজি ছিল বরিশালকে নিয়েই। কিন্তু আগে ব্যাটিং করে সেই বাজির দান কিছুটা উল্টে দেওয়ার আভাস দেয় চিটাগং কিংস।
রানের উইকেটে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম উইকেটেই বরিশাল ভক্তদের হৃদয়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন চিটাগংয়ের দুই ওপেনার খাজা নাফে ও ইমন। প্রথম ৩ ওভারে ২৩ রান নেওয়া চিটাগং কিংসের রান রেট পরের ওভারে দশে নিয়ে গেলেন পারভেজ হোসেন। বাঁহাতি স্পিনার তানভির হোসেনের বলে এক চার ও দুই ছক্কায় নিলেন ১৮ রান।
মেয়ার্সের আগের ওভারে পরপর দুই চার মেরে ডালা মেলেন ইমন। পরের ওভারে তানভিরের বলে সুইপার কাভার দিয়ে মারেন চার। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক ফিরে পেয়ে স্লগ সুইপে ৯৩ মিটার দীর্ঘ ছক্কা মারেন ডিপ মিডউইকেট দিয়ে। পরের বলে লং অফ দিয়ে মারেন আরেকটি। এই দুই ব্যাটারের ব্যাটে ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯৩ রান তোলে চিটাগং।
এরপর ৩০ বলে ফিফটি পূরণ করেন ইমন। বাঁহাতি এই ব্যাটারের পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন নাফে। অবশ্য ফিফটি পূরণের পর বেশিক্ষণ টেকেননি এই ব্যাটার। দলীয় ১২১ রানের মাথায় বরিশাল পেসার এবাদত হোসেন বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৪৪ বলে ৬৬ রানের কার্যকরী ইনিংস।
নাফের বিদায়ের পরও চিটাগংয়ের রানের চাকা থেমে থাকেনি। গ্রাহাম ক্লার্ককে সঙ্গী করে ঝড়ো ব্যাটিং অব্যাহত রাখেন ইমন। দলীয় ১৯১ রানের মাথায় রানআউট হয়ে ফেরেন ক্লার্ক। ২৩ বলে ৪৪ রান করেন ডাহাতি এই ব্যাটার। শেষমেশ চিটাগং থামে ১৯৪ রানে।
প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পেতে চট্টগ্রামের ব্যাটাররা নিজেদের দায়িত্ব সারেন ভালোভাবে। কিন্তু বোলাররা আস্থার মান হারান শুরুতেই। টানা দ্বিতীয় ফাইনাল খেলতে নামা বরিশাল বড় রানের চাপ সামলে শুরু থেকে ছিল নির্ভার। তাওহিদকে নিয়ে প্রথম ওভার থেকেই চড়াও হন তামিম। সিঙ্গেল দিয়ে রানের খাতা খোলা তামিম প্রথম ওভারে হাঁকান তিন বাউন্ডারি। পরের ওভারে আরাফাত সানির সামনে হাত খুলতে না পারলেও তৃতীয় ওভারে শরিফুলের বল বাউন্ডারিতে পাঠান আরও তিনবার। ছুটতে থাকা তামিম ব্যক্তিগত পঞ্চাশ ছুঁতে সময় নেন স্রেফ ২৪ বল। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে আসা সানির বল ছক্কায় উড়িয়ে বরিশাল অধিনায়ক স্পর্শ করেন ব্যক্তিগত পঞ্চাশ।
অধিনায়কের সঙ্গে থাকা তাওহিদ খেলেছেন রয়ে সয়ে। এক প্রান্তে ঝড় তুলেছেন তামিম, অন্য প্রান্তে তাওহিদ দিচ্ছিলেন দারুণ সঙ্গ। দুই ওপেনারে চড়ে জয়ের গল্প অনেকটাই লিখে ফেলে বরিশাল। ২৯ বলে ৫৪ রান করে থামেন তামিম। তাওহিদও ফিরে যান ৩২রান করে। পরের পথটুকু বাকিদের নিয়ে পাড়ি দেন কাইল মায়ার্স। চারে নেমে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দিয়ে মাঠ ছাড়েন মায়ার্স। নিজে খেলেন ২৮ বলে ৪৬ রানের দারুণ ইনিংস। সঙ্গে রিশাদের দারুণ ফিনিশিংয়ে বরিশাল হাসে দ্বিতীয় শিরোপার হাসি।