এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়

মঞ্চ সাজানো ছিল বাংলাদেশের জন্য। বোলাররা নিজেদের কাজটা করেছেন ঠিকঠাক। এরচেয়ে ভালো কতটুকুই করা যায়! বোলাররা যতখানি ভালো করেছেন, ব্যাটাররা তারচেয়ে বেশি হতাশ করেছে। পাল্লা দিয়ে যেন খারাপ করেছে একজন আরেকজনের চেয়ে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে অলিখিত সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া ম্যাচে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ১১ রানে।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান তোলে দলটি। জবাবে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রানে থামে বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। ইনিংসের পঞ্চম বলে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ নাওয়াজের হাতে। শুরুর সেই ধাক্কা কাটিয়ে সাইফ হাসান আর হৃদয়ের ব্যাটে ছুটছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২২ রান তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর সেই শাহিনকে জোর করে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন সাইম আইয়ুবের হাতে। ফিরলেন ১০ বলে ৫ রান করে।
দলের বিপদে বাড়ে ইনফর্ম সাইফ হাসানের বিদায়ে। হারিস রউফের বলে ব্যাটের কোনায় লেগে সাইমের হাতে ধরা পড়েন সাইফ। ১৫ বলে ১৮ করেন সাইফ। শেখ মেহেদি আউট হলে বাড়ে চাপ। ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে নিচ্ছিলেন নুরুল হাসান সোহান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ২১ বলে ১৬ রান করে সোহান কাটা পড়েন সাইম আইয়ুবের বলে। ২৫ বলে ৩০ রান করা শামীমকে ফেরান আফ্রিদি। তখনই শেষ হয় বাংলাদেশের সম্ভাবনা। লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছেন। রিশাদ হোসেন চেষ্টা করেছিলন, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে যায়। ১১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন রিশাদ।
পাকিস্তানের পক্ষে আফ্রিদি ও হারিস নেন তিনটি করে উইকেট। দুই উইকেট পান সাইম। একটি নেন নাওয়াজ।
এর আগে বল করতে নেমে শুরুতেই পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানে বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ বলে তাসকিনের শিকার হন ইনফর্ম ব্যাটার সাহিবজাদা ফারহান। আগের বলে চার হাঁকানো সাহিবজাদা চতুর্থ বলেও সেই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পয়েন্টে ধরা পড়েন রিশাদ হোসেনের হাতে। ফেরার আগে ৪ বলে ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। চার রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তান দ্বিতীয় উইকেট হারায় ৫ রানে। এবার শিকার করেন শেখ মেহেদি। তিনিও একাদশে ফিরেছেন এই ম্যাচ দিয়ে। মেহেদি বিদায় করেন সাইম আইয়ুবকে। রানের খাতা খোলার আগে তালুবন্দি হন রিশাদের।
শুরুর ধাক্কায় পাওয়ার প্লেতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে পাকিস্তান। ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফখর আর সালমান আলী আগা। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে থিতু হতে থাকা ফখরকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে বিপদে ফেলে দেন রিশাদ। ফেরার আগে ২১ বলে ১৩ রান করতে পেরেছেন ফখর। ২৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর রিশাদই এনে দেন আরেকটি সাফল্য। ৩৩ রানে হোসেইন তালাত ক্যাচ দেন সাইফ হাসানের হাতে। ৭ বলে ৩ করে বিদায় নেন। ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পাকিস্তান।
মাত্র ৮ ওভারে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল পাকিস্তান। বাকিদের যাওয়া-আসার ভিড়ে একপ্রান্ত আগলে রাখা অধিনায়ক সালমান আলী আগাকে ফিরিয়েছেন ফিজ। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারানো পর সন্দেহ জাগে পাকিস্তান শতরান পার করতে পারবে কি না। সেখান থেকে শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ নাওয়াজের সময়ের দাবি মেটানো দুটি ইনিংস পাকিস্তানকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচায়। আফ্রিদি ১৩ বলে ১৯ এবং নাওয়াজ ১৫ বলে ২৫ রান করেন। আফ্রিদিকে উইকেটের পেছনে জাকেরের ক্যাচ বানান তাসকিন। নওয়াজকে পারভেজ হোসেন ইমনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন তাসকিনই।
বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ২৮ রানে মেহেদি দুটি এবং ১৮ রানে রিশাদ পান দুই উইকেট। এক উইকেট মুস্তাফিজের ঝুলিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (সাহিবজাদা ৪, ফখর ১৩, সাইম ০, সালমান ১৯, তালাত ৩, মোহাম্মদ হারিস ৩১, শাহিন ১৯, মোহাম্মদ নাওয়াজ ২৫, ফাহিম ১৪*, হারিস রউফ ৩*; তাসকিন ৪-০-২৮-৩, মেহেদি ৪-০-২৮-২, সাকিব ৪-০-২৮-০, রিশাদ ৪-০-১৮-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৩-১)।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৪/৯ (সাইফ ১৮, ইমন ০, হৃদয় ৫, মেহেদি ১১, সোহান ১৬, শামীম ৩০, জাকের ৫, সাকিব ১০, রিশাদ ১৬* তাসকিন ৪, মুস্তাফিজ ৬*; আফ্রিদি ৪-০-১৭-৩, ফাহিম ২-০১৮-০, হারিস ৪-০-৩৩-৩, আবরার ৩-০-২৩-০, নাওয়াজ ৩-০-১৪-১, সাইম ৪-০-১৬-২)
ফলাফল : পাকিস্তান ১১ রানে জয়ী।