ব্যাটিং ব্যর্থতার গল্প লিখে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ

বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক মতোই করেছিল। দুইশর আগেই আটকে দিয়েছিল আফগানিস্তানকে। সেই সল্প রান তাড়ায় নেমেও যেন বড় রানের চাপ অনুভব করলেন ব্যাটাররা। আগের ম্যাচের মতো এদিনও ব্যর্থতার সেই পুরোনো গল্পই রচনা করলেন তারা। পেস কিংবা স্পিন, কোনো বলই খেলতে পারেনি তামিম-হৃদয়রা। ফলাফলও স্পষ্ট—টানা দুই হারে সিরিজ খোয়াল আফগানদের কাছে।
আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৪.৫ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রানের পুঁজি দাঁড় করিয়েছিল আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ২৮.৩ ওভারে ১০৯ রান তুলতেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৮১ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে মিরাজের দল।
রান তাড়ায় নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন ব্যাটাররা। বাংলাদেশের ব্যাটারদের রানকে পাশাপাশি সাজালে তৈরি করা যায় টেলিফোন নাম্বার— ০, ২২, ৭, ২৪, ৪, ১৮, ১৫, ০, ৫, ০, ৫।
স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। ভালো খেলতে খেলতেই উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও (৯ বলে ৭)। জোর করে ২ রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে ফেরেন তিনি।
এ ম্যাচেও শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন সাইফ হাসান। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় শট খেলে ফেরেন তিনিও। সপ্তম ওভারে ওমরজাইকে টানা দুটি চার-ছক্কা মেরে পরের বলে আবারও বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন সাইফ। ফেরার আগে ২৩ বলে করেন ২২ রান।
দায়িত্ব নিতে পারেননি অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও (৭ বলে ৪)। দুর্দান্ত বল করতে থাকা রশিদ খানকে অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন তাওহিদ হৃদয়। ৩৪ বলে ২৪ রানের আশা জাগানো ইনিংসের পরিসমাপ্তি ডেকে আনেন তিনি।
ভালো শুরুর পরে ইনিংস বড় করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান (২০ বলে ১৫) ও জাকের আলীও (৪৩ বলে ১৮)। পরের ব্যাটাররাও ফিরেছেন দ্রুতই।
ফাইফার তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে যেন একাই গুটিয়ে দিলেন রশিদ খান। রশিদের ৫ উইকেটের সঙ্গে ৩ উইকেট নেন ওমরজাই।
এর আগে টস হেরে বোলিংয়ে নেমে আফগান ব্যাটারদের খুব একটা সুবিধা করতে দেননি বোলাররা। আফগান শিবিরে প্রথম আঘাতটা হানেন পেসার তানজিম সাকিব। পঞ্চম ওভারে ১১ বলে ১১ রান করা রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফেরান তিনি। এরপর তিনে নামা সেদিকুল্লাহ অটলকে দ্রুতই ফিরিয়ে দেন তানভীর ইসলাম।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি হয়ে আসে রহমত শাহর চোট। ১১ বলে ৯ রান করে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুতই আরও দুই উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৪ বলের ব্যবধানে ফেরান অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি (১২ বলে ৪) আর আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে (৩ বলে ০)।
এরপর উইকেটে এসে থিতু হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মোহাম্মদ নবী। নবীর চেষ্টা সফল হতে দেননি সাকিব। ৩০ বলে ২২ রান করা আফগান অলরাউন্ডারকে ফেরান তিনি। পরে দ্রুতই বিদায় নেন নানগেইয়ালা খারোটি (২৪ বলে ১৩) ও রশিদ খান (২ বলে ১)।
বাকিদের যাওয়া-আসার ভিড়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশের বোলারদের আক্ষেপ হয়ে ছিলেন ওপেনার ইব্রাহীম জাদরান। তবে তাকেও সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে ফিরিয়েছেন মিরাজ। ১৪০ বলে ৯৫ রান করে রিশাদকে ক্যাচ দেন তিনি।
এরপর হাত খুলতে থাকা গজনফারকে ফিরিয়ে দেন রিশাদ। চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া রহমত আবার ফিরলেও মাত্র একবল খেলে হুইল চেয়ারে করে মাঠ ছাড়েন তিনি। আফগানদের ইনিংস শেষ হয় ১৯০ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ৪৪.৫ ওভারে ১৯০/৯ (গুরবাজ ১১, জাদরান ৯৫, সেদিকুল্লাহ ৮, হাসমতুল্লাহ ৪, ওমরজাই ০, নবী ২২, খারোটি ১৩, রশিদ ১, গজনফার ২২, রহমত ৯৮, বশির ০*; সাকিব ৭-০-৩৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৮-০, মিরাজ ১০-১-৪২-৩, তানভীর ১০-০-৩৫-১, রিশাদ ৯.৪-০-৩৭-২)।
বাংলাদেশ : ২৮.৩ ওভারে ১০৯/১০ (তামিম ০, সাইফ ২২, শান্ত ৭, হৃদয় ২৪, মিরাজ ৪, জাকের ১৮, সোহান ১৫, সাকিব ০, রিশাদ ৫, তানভীর ০, মুস্তাফিজ ৫*; ওমরজাই ৭-১-২৭-৩, বশির ২-০-২২-০, গজনফার ৪-০-২১-০, রশিদ ৮.৩-২-১৭-৫, খারোটি ৭-২-২২-১)।
ফলাফল : আফগানিস্তান ৮১ রানে জয়ী।