ম্যাচ হেরেও হতাশ নয়, দল নিয়ে গর্বিত নিগার

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করেও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। জয় প্রায় হাতের মুঠোয় এনে ফেলেও ক্যাচ মিস ও রানআউটের সুযোগ হাতছাড়া করায় ম্যাচ হারতে হয়েছে নিগার সুলতানাদের। তবে ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি গর্ব করেছেন দলের লড়াকু মানসিকতা নিয়ে।
ভারতের বিশাখাপত্তনমে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সোমবার (১৩ অক্টোবর) দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বাংলাদেশ হেরেছে তিন উইকেটে। টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশ বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩২ রান তোলে। জবাবে ৪৯.৩ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
শুরুতে ব্যাটিং করে ২৩৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে। লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচে ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। বাংলাদেশের জয় তখন অনেকটাই সম্ভাবনার মধ্যে।
কিন্তু সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে ৮৫ রানের জুটি গড়েন কোল ট্রায়ন ও মারিজানে কাপ। এই দুজনের দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ায় প্রোটিয়ারা। তবুও ১৯৮ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়ে যখন ফের ম্যাচ ফেরে বাংলাদেশ। নাহিদা-মারুফারা জমিয়ে তোলে ম্যাচ।
কিন্তু শেষ ওভারে যখন প্রোটিয়াদের ৯ রান দরকার, তখন উইকেটে সেট হয়ে থাকা নাদিনে ডি ক্লার্ক থাকা লং অফে সহজ ক্যাচ তুলে দেন। কিন্তু স্বর্ণা আক্তার তা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। এর আগেও পঞ্চম ওভারে উলভার্ট যখন ১১ রানে তখন তার ক্যাচ মিস করেন রাবেয়া খান। প্রোটিয়াদের যখন ৪২ বলে ৫৩ রান লাগে তখন লং অনে বাউন্ডারিতে ক্যাচ ক্লোই ট্রায়নের সহজ ক্যাচ ছাড়েন সুমাইয়া আক্তার। এছাড়া রানআউটের আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করে টাইগ্রেসরা।
জয়ের এমন কাছাকাছি যেয়ে হারের পরও ম্যাচ শেষে দলের পারফরম্যান্সে গর্বিত অধিনায়ক নিগার। তিনি বলেন, ‘আমি হতাশ না, বরং গর্বিত। মেয়েরা প্রতিটি বলের জন্য লড়েছে। এমন ম্যাচে চাপ সামলে খেলা সহজ ছিল না। কিন্তু দল যেভাবে ১১০ শতাংশ দিয়েছে, তাতে আমি খুশি। অবশ্যই কিছুটা আক্ষেপ আছে—এমন ম্যাচ জিততে পারলে দারুণ হতো আমাদের জন্য। এখনও উন্নতির জায়গা আছে। শেষ তিন ম্যাচে আমরা আরও ভালো খেলতে চাই।’
ব্যাটিংয়েও দেখা গেছে ধীর গতি। ফারজানা পিংকি ও রুবাইয়া হায়দার পাওয়ার প্লেতে উইকেট না হারালেও ১০ ওভারে তুলেন মাত্র ২৮ রান। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ১৬.১ ওভারে ৫৩ রান তুলে। এ নিয়ে নিগার বলেন, ‘শুরুতে আমাদের পরিকল্পনা ছিল পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট হারাব না। আমরা আমাদের লক্ষ্যের চেয়ে ১৫-২০ রান কম করেছি। টপ অর্ডার যদি একটু বেশি স্ট্রাইক পরিবর্তন করে রান তুলতে পারো, তাহলে সেই রান তোলা সম্ভব ছিল। ফিল্ডিংয়েও আরও ভালো করা যেত। তবে আমাদের হতাশ হওয়া বা মন খারাপ করার কিছু নেই।’
বাংলাদেশের সামনে এখনো তিনটি ম্যাচ বাকি। সেমিফাইনালে ওঠার আশা ফুরিয়ে যায়নি। সেই বিশ্বাসই ধরে রাখতে বলছেন অধিনায়ক, ‘ইংল্যান্ড ম্যাচেও আমরা দ্রুত ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু ৩০ ওভারের পর আমরা সঠিক জায়গায় বল করতে পারিনি। কিন্তু আজ ভিন্ন ছিল পরিস্থিতি। ব্যাটিংয়ের মাঝে এবং খেলার বিরতিতেও সঠিক লেংথে বল করা নিয়ে আমরা পরস্পর কথা বলেছি। বোলাররা তা ভালোভাবে করতে পেরেছে। জানি আমাদের দলটা বেশ তরুণ, কিন্তু তারা দিনদিন আরও বেড়ে উঠছে। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা দুর্দান্ত। তাদের নিয়ে আমি কতটা গর্বিত বলেছি। জানিয়েছি এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ নয়।’
কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই করে শেষ বলে হারের দুঃখ থাকলেও টাইগ্রেসদের মনোবল এখনও অটুট। সামনের ম্যাচগুলোতে সেই আত্মবিশ্বাসই সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে নিগারদের জন্য।