বদলি হিসেবে দলে ফিরে ফাইনালের সেরা শেফালি
সপ্তাহ খানেক আগেও যিনি খেলছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট, একসপ্তাহের ব্যবধানে ঘুরে বদলে গেল তার ভাগ্যের চাকা। বিশ্বকাপের লিগ পর্ব শেষে তখন বাকি নকআউট। প্রতীকা রাওয়ালের চোটে বদলি হিসেবে দলে জায়গা পেলেন শেফালি ভার্মা। এরপরই বাজিমাত, ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বনে গেলেন এই অলরাউন্ডার। হয়ে গেলেন ফাইনাল সেরা। ম্যাচ শেষে শেফালি বলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে ভালো কিছু করার জন্য এখানে পাঠিয়েছেন।’
নাভি মুম্বাইয়ের ডি ওয়াই পাতিল স্পোর্টস একাডেমি স্টেডিয়ামে গতকাল রোববার (২ নভেম্বর) ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত।
ফাইনালে ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন শেফালি। ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে ৭৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে শক্ত ভিত গড়ে দেন শেফালি। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। এরপর বল হাতে ৭ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জায়গা পেয়ে শেফালির ফিরে আসা কার্যত নাটকীয়। গত আগস্টে যখন ভারতের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয় তখন জায়গা হয়নি শেফালির। ওপেনিংয়ে প্রতীকা রাওয়ালকে নির্বাচকরা বেছে নিয়েছিলেন, যিনিও টুর্নামেন্টের লিগ পর্বে ভালো খেলছিলেন।
কিন্তু লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পান প্রতীকা। এরপর টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যান তিনি। এর ফলে স্কোয়াডে ডাক পড়ে শেফালির। স্কোয়াডে যখন ডাক পেলেন তখন তিনি সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ট্রফিতে খেলতে হরিয়ানা দলের সঙ্গে সুরাটে। সেখান থেকে তিনি ফেরেন নাভি মুম্বাইয়ে। এরপর নকআউটের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে পারেননি শেফালি। রান তাড়ায় ৫ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফিরেন।
কিন্তু ফাইনালে আরও একবার সুযোগ পেয়েই সেটিকে ঠিকই কাজে লাগালেন শেফালি। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপে জয়ের নায়ক হয়ে গেলেন। তার খেলা ৮৭ রানের ইনংসটি ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে যেকোন সংস্করণে কোনো ভারতীয় ওপেনারের সর্বোচ্চ ইনিংস হিসেবে নথিভুক্ত হলো। অথচ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে শেফালির ৩১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস ছিল অপরাজিত ৭১। সেটিও ২০২২ সালের জুলাইয়ে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গ, প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত
শেফালি শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, বোলিংয়েও দারুণ অবদান রাখেন। ২১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় উইকেটে লরা উলভার্ট ও সুনে লিসের ৫২ রানের বিপজ্জনক জুটি ভাঙেন। পরের ওভারে তিনি আবারও উইকেটের দেখা পান, ফেরান মারিজান ক্যাপকে।
দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সে শেষ পর্যন্ত ফাইনাল-সেরা নির্বাচিত হন শেফালি। ২১ বছর ২৭৯ দিন বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ হয়ে আরেকট কীর্তি গড়ন। ছেলে কিংবা মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল বা ফাইনালে ‘প্লেয়ার অব দা ম্যাচ’ হওয়া সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার এখন তিনিই।
আরও পড়ুন: ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলিয়ে যেখানে দীপ্তিই প্রথম
ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়ে সহমর্মিতা জানিয়েছেন প্রতীকার প্রতি। যার চোটোই স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। শেফালি বলেন, ‘প্রতীকার যা হয়েছে (চোট), সেটি একজন খেলোয়াড়ের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়। কোনো খেলোয়াড়ই এমনটা কামনা করে না। যা কিছু হয়েছে, ঈশ্বর আমাকে ভালো কিছু করার জন্য এখানে পাঠিয়েছেন।’ আর সেই ‘ভালোটা’ এবার ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফিই এনে দিল।

                  
                                                  স্পোর্টস ডেস্ক