বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক ম্যাচে যত রেকর্ড

মিরপুরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি চরম নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে। নিজেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। কালো মাটির স্পিন নির্ভর উইকেটে ম্যাচ শুরুর থেকেই একের পর এক নতুন রেকর্ডের দেখা মিলেছে। উত্তেজনায় ভরা এই ম্যাচ নির্ধারিত ৫০ ওভারে টাই হলে প্রথমবারের মতো সুপার ওভারে গড়ায় বাংলাদেশের কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এদিন মিরপুরে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ তোলে ২১৩ রান। জবাবে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহও ছিল একই। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে ১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশে। ৬ বলের জায়গায় সব মিলিয়ে ৯ বল হলেও তিন ব্যাটার সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসন শান্ত সেই রান তুলতে পারেননি। ফলে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম সুপার ওভারেই হার দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায় বাংলাদেশ। এই রোমাঞ্চকর ম্যাচে আরও যেসব রেকর্ড হয়েছে তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার দুই প্রান্ত থেকেই স্পিনারদের দিয়ে বোলিং শুরু করেছে। এছাড়া তারা পুরো ইনিংসে পাঁচজন স্পিনারকেই ব্যবহার করেছে। দুজন পেসার জাস্টিন গ্রেভস এবং শেরফান রাদারফোর্ড দলে থাকলেও তাদের দিয়ে এক ওভারও বল করানো হয়নি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০ ওভারই করেছেন স্পিনাররা, যা ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার। ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫৪ বছরের ইতিহাসে এর আগে কোনো দল পুরো ৫০ ওভার স্পিন বোলিং করায়নি। তবে তিনবার স্পিনারদের দিয়ে ৪৪ ওভার করে বোলিং করিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
এই ম্যাচে দুই দল মিলে মোট ৯২ ওভার স্পিন বোলিং করে গড়েছে আরেকটি রেকর্ড। মোট ১০০ ওভারের খেলায় বাকি ৮ ওভার করেছে বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগে ছিল রেকর্ডটি ছিল ২০১৯ সালে দেরাদুনে আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে (৭৮.২ ওভার)।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রান দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পার্ট টাইম স্পিনার আলিক আথানেজ। তিনি পুরো ১০ ওভার বোলিং করে ১৪ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভার বল করে এত কম রান দেওয়ার রেকর্ড এর আগে ছিল মোহাম্মদ হাফিজের (১৫ রান)।
ব্যাটিংয়েও রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটার রিশাদ হোসেন। মাত্র ১৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ২৭৮.৫৭। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ওয়ানডেতে সর্বনিম্ন ৩০ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট রিশাদের। এর আগে এই রেকর্ড ছিল মাশরাফী বিন মর্তুজার। তার স্ট্রাইকরেট ছিল ২৭৫।
এছাড়া বাংলাদেশের অফস্পিনার তানভীর ইসলামও গড়েছেন দারুণ এক ব্যক্তিগত রেকর্ড। অভিষেকের পর টানা ৮টি ওয়ানডে ম্যাচে উইকেট তুলে নেওয়া বাংলাদেশের একমাত্র বোলার তিনি। এর আগে অভিষেকের পর টানা ৭ ম্যাচে উইকেট পাওয়ার রেকর্ডটি ছিল এবাদত হোসেনের।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মিরপুরে সুপার ওভারে ১ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচে যদিও বাংলাদেশের জয় মেলেনি, তবুও রেকর্ড ও ঐতিহাসিক মুহূর্তে ভরা ম্যাচটির স্কোরকার্ডেই দেখে নিতে পারেন..
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২১৩/৭ (সাইফ ৬, সৌম্য ৪৫, হৃদয় ১২, শান্ত ১৫, মাহিদুল ১৭, নাসুম ১৪, সোহান ২৩, মিরাজ ৩২*, রিশাদ ৩৯*; আকিল ১০-১-৪১-২, চেজ ১০-২-৪৪-০, পিয়েরে ১০-০-৪৩-০, মটি ১০-০-৬৫-৩, আথানেজ ১০-৩-১৪-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫০ ওভারে ২১৩/৯ (আথানেজ ২৮, কিং ০, কার্টি ৩৫, আগুস্ত ১৭, রাদারফোর্ড ৭, মোটি ১৫, চেজ ৫, গ্রেভস ২৬, আকিল ১৬, পিয়েরে ২*,হোপ ৫৩*; নাসুম ১০-০-৩৮-২, তানভীর ১০-০-৪২-২, রিশাদ ১০-০-৪২-৩, সাইফ ২-০-৯-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-০, মুস্তাফিজ ৮-০-৪০-০)
সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১ ওভারে ১০/১ (হোপ ৭*, রাদারফোর্ড ৩, কিং ০*; মুস্তাফিজ ১-০-১০-১)
সুপার ওভারে বাংলাদেশ : ১ ওভারে ৯/১ (সৌম্য ৩, সাইফ ২*, শান্ত ০*; আকিল ১-০-৮-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ রানে জয়ী।