ক্যাচ মিসের পসরা সাজিয়ে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
 
কোনোদিন ব্যাটিং তো কোনোদিন ফিল্ডিং— বাংলাদেশের ম্যাচ হারের পেছনে এই দুই বিভাগের অবদান বেশ। শুরুতে ব্যাটিং ব্যর্থতার আরেকটি চিত্র মঞ্চস্থ করলেন ব্যাটাররা। নিঃসঙ্গ সেপাইয়ের মতো লড়াই করে দেড়শ ছাড়ানো লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিলেন তানজিদ হাসান তামিম। সেই অল্প রানেও আটকে রাখতে দারুণ শুরু করলেন বোলাররা। এরপরই ফিল্ডাররা দেখালেন তাদের অন্ধকার দিক। পুরো ম্যাচে গোটা সাতেক ক্যাচ ফেলে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল বাংলাদেশ তার ঘরের মাঠে।
আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ৩ ওভার ১ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল ক্যারিবীয়রা।
ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক ক্যাচ মিস করতে থাকে বাংলাদেশ। পাওয়ার-প্লের মধ্যেই হাত ফসকে ফেলে দেন গোটা চারেক ক্যাচ। একের পর এক জীবন পেয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হন ক্যারিয়বীয় ব্যাটাররা। পুরো ম্যাচ জুড়েই চলতে থাকে এটি।
এর ফাঁকেও এলবিডব্লিউ, স্টাম্পিং কিংবা বোল্ড আউট করে চেষ্টা করেছে বোলাররা। কিন্তু সেটি আর কত সময় করা যায়? ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু স্লিপে ক্যাচ ফেলে দেন সাইফ হাসান। পরের ওভারে অবশ্য আর সুযোগ দেননি লিটন দাস। শেখ মেহেদির বলে স্টাম্পিং করে ফেরত পাঠান আলিক আথানেজকে। ৮ বলে ১ রান করে ফেরেন তিনি।
এরপর অন্তত ফিল্ডাররা তিনবার জীবন দিয়েছেন আরেক ওপেনার আমির জাঙ্গু আর তিনে নামা ব্র্যান্ডন কিংকে। শেষ পর্যন্ত ফিল্ডারদের ওপর ভরসা না করে কিংকে বোল্ড করে ফেরান নাসুম আহমেদ। ৭ বলে ৮ রান করেন কিং। জীবন পেয়ে বাংলাদেশের বোলারদের বেশ ভালোই শাসন করছিলেন আমির। ভয়ঙ্কর হয় ওঠা আমিরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান রিশাদ হোসেন।
এরপর বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন রোস্টন চেজ আর আকিম অগাস্তে। চট্টগ্রামে চার-ছক্কার বৃষ্টি নামান এই দুজন। অবশ্য তাদেরও জীবন দিয়েছেন ফিল্ডাররা। ২৯ বলে ৫০ করা চেজকে শেষ পর্যন্ত বোল্ড আউট করে ফেরান রিশাদ হোসেন। এরপর ২৪ বলে হাফসেঞ্চুরি করা অগাস্তেকেও মেহেদির হাতে ক্যাচ নিয়ে ফেরান তিনি।
ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এরপর রোভম্যান পাওয়েল আর গুড়াকেশ মোতি এসে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন ১৯ বল বাকি থাকতেই।
বাংলাদেশর হয় সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। একটি করে উইকেট যায় মেহেদি ও নাসুমের ঝুলিতে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। তবে সেটি বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি। পাওয়ার-প্লের আগে-পরে মিলিয়ে দুই উইকেট হারিয়ে রানের গতিও কমিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ফেরত যান পারভেজ হোসেন ইমন (১০ বলে ৯) ও লিটন দাস (৯ বলে ৬)।
এরপর সাইফ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে সেই চাপ কাটিয়ে ওঠেন আরেক ওপেনার তানজিম হাসান তামিম। তৃতীয় উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তারা। মন্থর গতিতে এগোতে থাকা সাইফ ২২ বলে ২৩ রান করে ফিরলে ভাঙ্গে সেই জুটি।
এরপর বাকিরা যোগ দেন যাওয়া-আসার মিছিলে। তামিমকে সঙ্গও দিতে পারেননি পরের ব্যাটাররা। অনেকটা নিঃসঙ্গ সেপাইয়ের মতো একাই লড়াই চালিয়ে গেলেন তামিম।
ক্যারিয়ারের দশম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির কাছেও। তবে প্রথম শতকটা হাঁকানো হলো না তার। সেটি না হলেও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন টাইগার ওপেনার। শেষ ওভারে ফিরেছেন ৬২ বলে ৮৯ রান করে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৯ চার আর ৪ ছক্কায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন শেফার্ড। দুটি করে উইকেট গেছে পিয়েরে আর হোল্ডারের ঝুলিতে। একটি করে উইকেট পেয়েছেন আকিল ও চেজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে (ইমন ৯, লিটন ৬, সাইফ ২৩, রিশাদ ৩, নুরুল ১, নাসুম ১, জাকের ৫, তামিম ৮৯, ; হোল্ডার ৪-০-৩২-২, আকিল ৪-০-২৬-১, শেফার্ড ৪-০-৩৬-৩, চেজ ৪-০-২৩-১, পিয়েরে ৩-০-২৩-২, মোতি ১-০-১১-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৬.৫ ওভারে ১৫১/৫ (আথানেজ ১, আমির ৩৪, কিং ৮, চেজ ৫০, আগাস্তে ৫০, পাওয়েল ৫*, মোতি ৩*; মেহেদি ৪-০-১৮-১, শরিফুল ২-০-১২-০, তাসকিন ৩.৫-০-৫০-০, নাসুম ৩-০-২৯-১, রিশাদ ৪-০-৪৩-৩)
ফলাফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

 
                   স্পোর্টস ডেস্ক
                                                  স্পোর্টস ডেস্ক
               
 
 
 
