ইতিহাস সৃষ্টির অপেক্ষায় জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কক্ষপথে উড়তে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম মহাকাশ টেলিস্কোপ। এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত টেলিস্কোপটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ফ্রেঞ্চ গায়ানা থেকে ইউরোপিয়ান অ্যারিয়ান রকেটের মাধ্যমে কক্ষপথের উদ্দেশে উড্ডয়ন করানো হবে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপটির নকশা তৈরি ও নির্মাণে বিজ্ঞানীদের ৩০ বছরের নিরলস প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিকটতম তারা এবং মহাবিশ্বের জাজ্বল্যমান ছায়াপথের চিত্র ধারণের চেষ্টা করা। এ ছাড়া দূরবর্তী গ্রহে গ্যাসের উপস্থিতি মেলে কি না, তা জানতে বায়ূমণ্ডলও খতিয়ে দেখতে পারবে টেলিস্কোপটি। এর ফলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়েও তথ্য মিলতে পারে।
টেলিস্কোপটি মহাবিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে নতুন ধারণা দিতে সহায়তা করবে। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রশ্নের (মহাবিশ্বের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল এবং আমরা কি এখানে একাই) উত্তর পেতে কাজে দেবে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যদি এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, তাহলে বিপুল অর্থব্যয় পুষিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময় আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে (১২টা ২০ জিএমটি) অর্থাৎ ফ্রেঞ্চ গায়ানা থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে টেলিস্কোপটি উড্ডয়ন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে নির্মাণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে টেলিস্কোপটির সবকিছু ফ্রেঞ্চ গায়ানায় নেওয়া হয়েছে।
টেলিস্কোপটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ব্যাপক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেমন রয়েছে, তেমনি মহাকাশের উদ্দেশে উড্ডয়নের আগমুহূর্তের প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষাও করতে হচ্ছে তাঁদের।
মহাকাশে প্রবেশ করতে টেলিস্কোপটিকে ২৭ মিনিটের নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ কার্যক্রমে সফল হতে হবে। এরপর প্রতিটি অংশের সক্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধাপ রয়েছে। সেগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করতে হবে। এরপর রয়েছে প্রায় এক মাসের যাত্রা। পৃথিবী থেকে দেড় কোটি কিলোমিটার দূরত্বে স্টেশন করে টেলিস্কোপটি কাজ করতে শুরু করবে।
টেলিস্কোপটির উড্ডয়নের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সফলতম অ্যারিয়ান ফাইভ সিরিজের রকেট। আটানব্বই শতাংশের বেশি সাফল্য রয়েছে এর। সর্বশেষ ২০০২ সালে ব্যর্থ হয়েছিল এ সিরিজের একটি রকেট।
একত্রিশ বছর ধরে মহাকাশে অবস্থান করা হাবল টেলিস্কোপের আবিষ্কার কার্যক্রমকে বেগবান করা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের লক্ষ্য।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটির মধ্যে সাড়ে ছয় মিটার চওড়া একটি সোনালি আয়না থাকবে। চারটি সুপার-সেন্সিটিভ যন্ত্রের দিকে মুখ করে থাকা এ আয়না টেলিস্কোপটিকে পরিচিত তারা থেকে আগত আলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। যন্ত্র চারটিতে এক হাজার ৩৫০ কোটির বেশি বছর পর্যন্ত আগের বিষয় নিয়ে বোঝাপড়ার সক্ষমতা স্থাপন করা হয়েছে।
ওয়েব টেলিস্কোপটিকে ‘অসাধারণ একটি মিশন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস এজেন্সির (নাসা) প্রশাসক বিল নেলসন। তিনি বলেন, ‘বড় করে স্বপ্ন দেখলে কী অর্জন করা যায়, তার উজ্জ্বল উদাহরণ এটি। আমরা আগাগোড়াই জানি, এটি ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রকল্প। তবে যখন বড় কিছু পেতে চাইবেন, অবশ্যই বড় মাপের ঝুঁকি নিতে হবে।’
প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা), ইউরোপীয় ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইএসএ) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠানো প্রকল্পের প্রকৌশলীদের অন্যতম জেমস ওয়েবের নামে নামকরণ হয়েছে এ টেলিস্কোপটির।