কেরানীগঞ্জে হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ‘আইটি/হাই-টেক পার্ক’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় ভারতের হাই-কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জের ঝিলমিলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই আইটি পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত একারণে যে আজ কেরানীগঞ্জে আইটি/হাই-টেক পার্ক-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন কেরানীগঞ্জবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় অনেকেই বিদ্রুপ করেছে। অথচ এখন এই ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। মুজিববর্ষে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছি। কেরানীগঞ্জে হাই-টেক পার্ক স্থাপন সম্পন্ন হলে এই এলাকার ছেলেরা গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্যর বদলে অনলাইনে কাজ করে ডলার উপার্জন করতে পারবে, যা এই দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।’
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল দেশের প্রতিটি মানুষ ভোগ করছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে একটি স্বল্পোন্নত দরিদ্র প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিণত করেছেন। যিনি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছেন এবং ১৩ কোটি মানুষকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করেছেন।’
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, তারুণ্যের মেধা ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণেরা চাকরি করবে না চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্রেইন চাইল্ড আইটি/হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, স্কুল অব ফিউচার, ডিজিটাল এডুটেইনমেন্ট সেন্টারসহ দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীতে আমাদের মেধাবী তরুণেরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি রোবটিক্স, আইওটি, সাইবার সিকিউরিটি টুলস তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করবে।’
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী দুই দেশের অত্যন্ত উন্নত সম্পর্ক আরও দৃঢ়করণ এবং আইসিটি সেক্টরসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যমে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে ৩৬ হাজার জন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইসিটি খাতে প্রায় ২২ হাজার জনের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেরানীগঞ্জের ৩.২৭২ একর জমিতে এই হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে এখানে প্রায় ১৫ হাজার জনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অনু্ষ্ঠানে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা এবং ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।