মানবজাতি সম্পর্কে জানাতে মহাকাশে উইকিপিডিয়া!
বিশ্বের প্রথম ব্লকবাস্টার সায়েন্সফিকশন সিনেমা ইটি থেকে শুরু করে হাল আমলের স্টার ট্রেক পর্যন্ত সবখানেই ‘ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের’ দেখানো হয়েছে পৃথিবী সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ হিসেবে। চলচ্চিত্রের কাহিনীগুলোতে পৃথিবীর মানুষকে শত্রু ভেবে বারবার আক্রমণ করেছে ভিনগ্রহীরা।
এটা ভেবেই হয়তো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার সব তথ্য পাঠাতে চান মহাকাশে, যাতে ‘ভিনগ্রহের বাসিন্দারা’ পৃথিবী সম্পর্কে জানতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম মিরর জানিয়েছে, মহাকাশে প্রাণের সন্ধানে থাকা প্রতিষ্ঠান (ইআইআই) মহাকাশে সম্ভাব্য ভিনগ্রহী আর তাঁর সঙ্গীদের জন্য এই তথ্যগুলো পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। পৃথিবী থেকে অনেক দূরে যদি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী থেকেই থাকে, তবে তাদের জন্য হয়তো এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন এক আবিষ্কার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, উইকিপিডিয়ার তথ্যগুলো পাঠানো হবে রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে। অন্তত ২০ আলোকবর্ষ দূরের ১০০টি তারকামণ্ডলে পৌঁছাবে পৃথিবীর তথ্যরাজি! তথ্যগুলো পাঠাতে বিপুল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হবে।
এ পরিকল্পনাগুলো নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সাথে আলাপেও বসতে চান বিজ্ঞানীরা। কারণ তাঁরা মনে করছেন, মহাকাশের প্রত্যুত্তর বন্ধুসুলভ নাও হতে পারে।
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড ব্লেকের মতে, ‘এই তথ্য পাঠানোর বিষয়টিতে দুটি প্রশ্ন আছে। যদি মহাকাশের প্রাণীরা হিংস্র বা শিকারি হয়, তাহলে এর মাধ্যমে হয়তো আমরা তাদের মনোযোগ আমাদের দিকে আকর্ষণ করছি। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, যদি আমরা আগ বাড়িয়ে যোগাযোগ করতে যাই তবে এর ফলাফল কী হবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘হয়তো মহাকাশে আরো অনেক সভ্যতা আছে। তারাও জানে বা শুনছে আমাদের কথা, কিন্তু আমরা যদি নিজেদের সম্পর্কে না জানাই তাহলে আর যোগাযোগই হবে না।’
বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক স্টিফেন হকিংও ভিনগ্রহের প্রাণীতে বিশ্বাস করা মানুষদের অন্যতম। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘বিশাল এ মহাকাশে হয়তো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে। তারা কোনো না কোনোভাবে হয়তো জানাচ্ছে আমাদের তাদের কথা। আমাদেরও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যদি মহাকাশচারীরা আমাদের গ্রহে আসে নিঃসন্দেহে এর ফলাফল হবে অনেক বিস্তৃত। এটা অনেকটা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মতো ব্যাপার হবে। তবে কলম্বাসের আমেরিকায় পদার্পণ কিন্তু আমেরিকার আদি অধিবাসীদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি।’
তবে ফলাফল যাই আসুক না কেন- মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে জল্পনাকল্পনা কিন্তু থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে অনেক দিন থেকেই চলছে মহাকাশে প্রাণের সন্ধান। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও আছে প্রচুর। সেই বিতর্কে তথ্য পাঠানোর বিষয়টি একটি নতুন রসদ নিঃসন্দেহে।