সিমকার্ড তৈরির প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং!

আবারও গোয়েন্দাগিরির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে। এবারের অভিযোগ কোড চুরির জন্য নেদারল্যান্ডসের মোবাইল সিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গেমাল্টো হ্যাক করেছিল গোয়েন্দারা। আর এই তথ্য ফাঁস করেছেন আলোচিত সাবেক গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন। এই অভিযোগকে গুরুতর বলে আখ্যা দিয়েছে ডাচ প্রতিষ্ঠান গেমাল্টো।
বিবিসিতে প্রকাশিত এই খবরে জানানো হয়, সিম প্রস্তুতের জন্য প্রতিষ্ঠাটির ৪০টি কারখানা রয়েছে এবং বিশ্বের ৮৪টি দেশে তাদের কার্যক্রম চালু আছে। স্নোডেনের ফাঁস করা গোপন তারবার্তায় বলা হয়, গোপনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোবাইল যোগাযোগের ভয়েস রেকর্ড এবং তথ্য পেতে সিমকার্ড হ্যাক করা হয়েছিল। যাদের নেটওয়ার্ক হ্যাক হয়েছিল তাদের মধ্যে রয়েছে এটিঅ্যান্ডটি, টি-মোবাইল, ভেরিজন, স্প্রিন্টের মতো বাঘা বাঘা মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ৪৫০ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কও হ্যাক করেছিল গোয়েন্দারা।
২০১০ সালের দিকে সিমকার্ড হ্যাকিং শুরু করে ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান জিসিএইচকিউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ। হ্যাকিংয়ের কাজ ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করার জন্য মোবাইল হ্যান্ডসেট এক্সপ্লয়েটশন টিম নামে আলাদা একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করেছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব অভিযোগের ব্যাপারে তারা মুখ খোলেনি।
অভিযোগের ব্যাপারে কিছু না বললেও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘তাদের সব কাজই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা কোনো কাজ করে না।’
প্রত্যেক সিমকার্ডেই রয়েছে এনক্রিপশন কোড। আর এই কোড ঠিক করে সিমকার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এই কোডের মাধ্যমে সিমের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। চাইলেই যে কেউ সিমকার্ড হ্যাক করে কারো মোবাইল যোগাযোগের তথ্য নিতে পারবে না। কিন্তু এনক্রিপশন কোড জানা থাকলে নির্দিষ্ট কোনো সিম হ্যাক করে তার ভয়েস রেকর্ড এবং টেক্সট ম্যাসেজ জেনে নেওয়া যায়। তবে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যেমন হোয়াটস্যাপ, আইম্যাসেজ- এগুলো হ্যাক করতে হলে আলাদা এনক্রিপশন কোড জানতে হয়।
সিমকার্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং চালিয়ে কোডগুলো চুরি করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন টেলিফোন অপারেটিংয়ে ব্যবহৃত সিমগুলো হ্যাক করে তাদের ভয়েস রেকর্ড এবং টেক্সট ম্যাসেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা।
সিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গেমাল্টোর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমরা এখনো হ্যাকিংয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। তবে অভিযোগটি আমরা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সিমকার্ডের ক্ষেত্রে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
ব্রিটিশ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নতুন করে ওঠা এই অভিযোগে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টেলিফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক এরিক কিং জানিয়েছেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আইনের শাসন কাকে বলে সেটা ভুলে গেছে। পৃথিবীর সব মানুষেরই তার যোগাযোগের গোপনীয়তার রক্ষার অধিকার রয়েছে। সেটা কেউ নষ্ট করতে পারে না।’