বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে সমুদ্র!
মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সাগরের জীববৈচিত্র। সাগরের খাদ্যচক্রের প্রতিটি ধাপের প্রাণীই আছে হুমকির মধ্যে। তবে এখনই যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সমুদ্রগুলোতে বিলুপ্তির হিড়িক পড়ে যাবে। নতুন এক গবেষণার ভিত্তিতে গবেষকরা এই দাবি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক মানুষের কর্মকাণ্ড ও সাগরের জীববৈচিত্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার বিষয়ে গবেষণা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস জে ম্যাকাউলি। গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
ভূমির জীববৈচিত্র্য গবেষণার চেয়ে সাগরের ওপর গবেষণা কয়েক গুণ কঠিন। আর কোনো সাগরের একটি নির্দিষ্ট অংশের ওপর গবেষণা অন্য কোনো স্থান বা সাগরের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। তাই ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা সব সাগরের বিভিন্ন স্থানের ওপর গবেষণা করেন। গবেষণায় ওই অংশে মাৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণসহ নানা বিষয়ের তথ্য নেওয়া হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাসস্থান হারিয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিতভাবে সাগরের সম্পদের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সর্বোপরি অপরিকল্পিতভাবে মানুষের সাগর ব্যবহারের কারণেই জীববৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। সাগরের কিছু প্রাণী প্রজাতি এর মধ্যেই ধ্বংস হয়েছে। অনেক প্রজাতি হুমকির মুখে।
গবেষণায় জানা গেছে, এখনো সাগরের প্রাণিবৈচিত্র্য কমার হার ভূমির চেয়ে অনেক কম। তবে সাগরের কিছু প্রাণী কমার দায় পুরোটাই পড়ে মানুষের ওপর। মানুষের কিছু কর্মকাণ্ড সব সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থানেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গবেষকরা বলেন, বৃহৎ তিমি থেকে শুরু করে সাগরের কিছু শৈবাল প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলার জন্য মানুষই দায়ী। প্রজাতি হ্রাসএমন হারে চলতে থাকলে অচিরেই সাগরের পুরো জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলায় মানুষের কয়েকটি কর্মকাণ্ডের কথা বলা হয়। যার মধ্যে আছে, সাগরের কাছাকাছি মৎস্য চাষ, সাগরের তলদেশ থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ ও এই কাজের জন্য বৃহৎ যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং সাগরের মৎস্যসম্পদ আহরণ বেড়ে যাওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এরই মধ্যে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এখনই কার্যকর কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়া সাগর ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা অসম্ভব।
সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে
অপর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর সাগরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। এতে বৈশ্বিক উষ্ণতার হার বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়েছে।
২০১৪ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, বাতাসের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। তবে এটিই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বের শক্তিব্যবস্থায় কত শক্তি যুক্ত হলো। এটি নির্ভর করে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ওপর। তাই বাতাসের তাপমাত্রা কোনো বছর কমতে বা বাড়তে পারে। কিন্তু সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক ‘গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বেড়েছে। এই বৃদ্ধি এতটাই যে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা এনওএএর এ বিষয়ক প্রকল্পিত চার্টটি নতুন করে বানাতে হচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতার হার কমাতে হলে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমানোর প্রতি জোর দিতে হবে এখনই।