বিমান চলাচল পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা
আকাশপথে চলাচল পরিবেশবান্ধব নয়। বিমান থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশের ক্ষতি করে৷ এ থেকে পরিত্রাণের বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে একটি হাইড্রোজেন ইঞ্জিন দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা।
জার্মানির ‘এইচটুফ্লাই’ কোম্পানির কর্মীরা দুই বছর ধরে এ লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইওসেফ কালো জানান,‘আমাদের প্রযুক্তি পরীক্ষা করার প্ল্যাটফর্মের নাম এইচআইফোর। আমরা হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করি, যেটা বৈদ্যুতিক মোটরকে বৈদ্যুতিক শক্তি দেয়৷ নতুন এই সংস্করণে ফুয়েল সেলকে হাইড্রোজেন দিতে প্রেসারাইজড ট্যাঙ্কের পরিবর্তে তরল ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়, যার ধারণক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি।’
খারাপ আবহাওয়ার কারণে ইওসেফ কালোর দলকে কয়েকবার টেস্ট ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। তবে আজকের দিনে সব ঠিক আছে। ইওসেফ কালো বলেন, ‘তরল হাইড্রোজেনের কারণে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার সুযোগ আছে, যা এভিয়েশন খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তাদের প্রকল্পের উপর সবাই নজর রাখছে, কারণ এয়ারবাসের মতো বড় কোম্পানিকেও ভবিষ্যতে উড়াল পরিবেশবান্ধব করতে তরল হাইড্রোজেনের উপর নির্ভর করতে হবে। এইচটুফ্লাই কোম্পানি যদি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে চায় তাহলে তাদের সিস্টেম আরও ছোট ও কমপ্যাক্ট করতে হবে। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ডিও৩২৮ টাইপের এই যাত্রীবাহী বিমানের জন্য তাদের একটি উপায় বের করতে হবে। ৩৩ আসনের এই বিমানের নির্মাতা ‘ডয়চে এয়ারক্রাফট' একে পরিবেশবান্ধব উড়ালের উপায় হিসাবে দেখছে।
ব্রিটিশ কোম্পানি ‘জিরোএভিয়া’ এ বছরের শুরুতে একটি ছোট দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট প্লেনের পরীক্ষামূলক উড়াল সম্পন্ন করেছে। তবে মাত্র একটি বৈদ্যুতিক মোটর ও বায়বীয় হাইড্রোজেন ছিল। অন্য মোটরটি ছিল সাধারণ কম্বাশান ইঞ্জিন।
এয়ারবাসও হাইড্রোজেন প্রপালশনে আগ্রহী। তাই তারা ওই কোম্পানির কিছু অংশ কিনে নিয়েছে। দুই বছরের মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ রুটে চলা বিমানকে হাইড্রোজেনচালিত করতে চায় এই স্টার্টআপ কোম্পানি।
বিমান নির্মাতা বিশেষজ্ঞ মির্কো হর্নুং আশা করছেন,‘যে গতিতে প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ২০৪০-এর মধ্যে এটা প্রস্তুত হয়ে যাবে। ৫০ থেকে ৭৫ বা ৮০ যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ছোট প্লেনের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।’
শুধু ইঞ্জিন নয়, সম্পূর্ণ নতুন প্রক্রিয়ার কথা ভাবা হচ্ছে - এয়ারক্রাফটের নকশা থেকে শুরু করে হাইড্রোজেন উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার।
স্টুটগার্টের কোম্পানিটি দেখিয়েছে, কী করা সম্ভব। তরল হাইড্রোজেন দিয়ে আজ ৭০০ কিলোমিটার যাওয়া যাচ্ছে, ভবিষ্যতে যাওয়া যাবে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার পথ। ভবিষ্যতে ট্রান্স-আটলান্টিক ফ্লাইট পরিচালনাও সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।