বৈদ্যুতিক যানে জার্মানির চেয়ে চীন এগিয়ে
প্রচলিত তেল-চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে জার্মান ব্র্যান্ডগুলো গোটা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হলেও ইলেকট্রিক যানের ক্ষেত্রে চীনই শীর্ষ স্থানে ৷ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে জার্মান কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বাড়ছে।
জার্মানির গাড়ি শিল্প চীনের বাজারে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েক দশক ধরে বিএমডাব্লিউ, ফলক্সভাগেন ও মার্সিডিস বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজারে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করছে।
চীনের উৎপাদনকারীরা গোটা বিশ্বের কমবাসচন ইঞ্জিনের এক তৃতীয়াংশের বেশি বিক্রি করে এসেছে। তবে এখন সেই বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে। ইলেকট্রিক গাড়ির উন্নতির ক্ষেত্রে চীন বাকিদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে গেছে। জার্মান কোম্পানিগুলো কি এখনো তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে?
চীনের উৎপাদনকারীরা ইলিকট্রিক গাড়ির অভ্যন্তরীণ বাজারের ৬০ শতাংশেরও বেশি দখল করে রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিদেশি কোম্পানির মধ্যে জেনারেল মোটরস চীনের বাজারের প্রায় নয় শতাংশ এবং টেসলা সাত শতাংশ ধরে রেখেছে। মাত্র তিন শতাংশ নিয়ে এর ঠিক পরেই ফলক্সভাগেনের স্থান।
চীনা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ সাবিনে ইয়াং-স্মিট বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে জার্মানিকে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে।গাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হবে না। চীনের বিনিয়োগের সঙ্গে জার্মানি পাল্লা দিতে পারবে না।’
কিন্তু জার্মান কোম্পানিগুলো সেই বাস্তব মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তারা এখনো ইলেকট্রোমোবিলিটির ক্ষেত্রে সেরা অবস্থানের জন্য লড়াই থেকে সরে আসতে চায় না।
প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অতীতের ঘাটতি পূরণ করতে চীনে একাধিক গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে চীন ও জার্মানিতে অবস্থিত জার্মান কোম্পানির কারখানায় বৈদ্যুতিক যান উৎপাদনে গতি আনার চেষ্টা চলছে।
ম্যার্কাটর চীন গবেষণা কেন্দ্রের গ্রেগর সেবাস্টিয়ান মনে করেন, ‘চীন অবশ্যই অত্যন্ত উদ্ভাবনী হয়ে উঠেছে৷ জার্মান গাড়ি কোম্পানিগুলি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইছে৷ সফ্টওয়্যার ও ব্যাটারি ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় মানুষের জ্ঞান কাজে লাগাতে চাইছে।’
ফল্কসভাগেন, মার্সিডিস ও বিএমডাব্লিউ চীনা সহযোগীদের সঙ্গে সহযোগিতার সূচনা করতে ৫০০ কোটি ইউরোরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে।
চীনের গাড়ি ক্রেতাদের কাছে জার্মান ব্র্যান্ডগুলো জনপ্রিয় হলেও জার্মান গাড়ি তেমন বিক্রি হচ্ছে না। যানের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাছাড়া অটোনমাস বা স্বচালিত ড্রাইভিং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও জার্মানরা পিছিয়ে রয়েছে।
তবে শুধু চীনে নয়, জার্মানির উৎপাদনকারীদেরও বড় আকারে বিনিয়োগ করতে হবে। যেমন ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য ২০৩৫ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি ইউরো ব্যয় করতে হবে।
প্রচলিত কম্বাসচন ইঞ্জিনের ব্যবসা থেকে পাওয়া কোটি কোটি ইউরোর মুনাফা কাজে লাগিয়ে একদিকে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে চলতে হবে। অন্যদিকে সেকেলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
এনআইও কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা চিন লিহং বলেন, ‘জার্মান কোম্পানিগুলোর অতীতের সাফল্য সম্ভবত প্রচলিত তেলচালিত গাড়ির উপর নির্ভর করে ছিল। তারা সাফল্যের সেই পথ ছাড়তে দ্বিধা করছে। নতুন কোম্পানি হিসেবে আমাদের এমন সমস্যা নেই। আমাদের কোনো পুরানো অভ্যাস ঝেড়ে ফেলতে হয় না। ফলে আমরা আরো দ্রুত অগ্রসর হতে পারি।’
চীন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি রপ্তানিকারী দেশ। শীর্ষ স্থান থেকে তারা জাপান ও জার্মানিকে সরিয়ে দিয়েছে। বিওয়াইডি-র মতো চীনা কোম্পানিগুলোর সুবিধা হলো ব্যাটারি থেকে শুরু করে গাড়ি উৎপাদন পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া একটি কোম্পানির হাতেই রয়েছে।
গোটা বিশ্বে বৈদ্যুতিক যানের ক্ষেত্রে টেসলা সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। বাজারে প্রায় ১৮ শতাংশ টেসলার হাতে। তার ঠিক পরেই চীনের বিওয়াইডি ও এসএআইসি রয়েছে। মাত্র সাত শতাংশ ভাগ নিয়ে ফলক্সভাগেন চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তারপর আবার চীনের গিলি-ভলভোর স্থান।
জার্মানির গাড়ি কোম্পানিগুলো আবার নতুন করে চীনের বাজারের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। সেই কৌশল কাজ করবে কিনা, আগামী কয়েক বছরেই তা জানা যাবে।