বন্ধ হলো মেটার ক্রাউডট্যাঙ্গেল, সাংবাদিক-গবেষকদের হাহাকার
ডেটা ট্র্যাকিং টুল ক্রাউডট্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্যের উৎস অনুসরণসহ নানা কারণে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মালিকানাধীন এই ডেটা ট্র্যাকিং টুলটির মাধ্যমে সংবাদকর্মী, গবেষক, তথ্য যাচাইকারীরা আলোচনার শীর্ষে থাকা বিষয়বস্তু নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন লেখার সুযোগ পেতেন।
ক্রাউডট্যাঙ্গেল এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা বিভিন্ন কন্টেন্ট সহজে অনুসরণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। তবে জনপ্রিয় এই টুলটি মেটা বন্ধ করে দিচ্ছে।
মার্কিন নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় আগে নেওয়া মেটার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অনেকেই। আমেরিকান অলাভজনক ওপেন সোর্স প্রতিষ্ঠান মোজিলা ফাউন্ডেশনের মতে, ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মেটাকে এই পরিকল্পনা বন্ধ করার জন্য, অথবা কমপক্ষে ছয় মাস অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি এবং আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন।
ইউরোপীয় কমিশন এবং মার্কিন সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যদের একটি দ্বিদলীয় গোষ্ঠী সহ নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, ক্রাউডট্যাঙ্গেল বন্ধ করা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের আশেপাশে নিরাপত্তার হুমকি এবং ভুল তথ্য সনাক্ত করতে গবেষকদের সাহায্য করার জন্য এটি দরকারী।
নতুন টুল মেটা কনটেন্ট লাইব্রেরি, যা আরো সীমিত
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স পোস্টের প্রচার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ক্রাউডট্যাঙ্গেল। মেটা গত কয়েক বছর ধরে ক্রাউডট্যাঙ্গেল টুলটির সেবা সীমিত করতে শুরু করে এবং নতুন সেবা গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্রাউডট্যাঙ্গেল এর পরিবর্তে মেটা কনটেন্ট লাইব্রেরি শিরোনামে নতুন টুল নিয়ে আসার কথা এক ব্লগ পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নতুন এই টুল আরও বিস্তৃত এবং প্ল্যাটফর্মগুলিতে কী ঘটছে তার আরও ভাল চিত্র সরবরাহ করবে।
তবে বলা হচ্ছে, কন্টেন্ট লাইব্রেরি অ্যাক্সেস করার জন্য আবেদন করতে হবে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরিতে (একাডেমিক বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যারা বৈজ্ঞানিক বা জনস্বার্থে গবেষণা করছে) এই সুবিধা পাবেন গবেষকরা। তবে ক্রাউডট্যাঙ্গেল থেকে মেটা কনটেন্ট লাইব্রেরির অ্যাক্সেস অনেক বেশি সীমিত।
শতাধিক গবেষক বলেছেন, মেটা কন্টেন্ট লাইব্রেরি সেবা এখনও পরিপূর্ণ নয়। তারা নতুন টুলের উন্নতিকে স্বাগত জানানে বলছেন, মেটা নতুন এই সেবা চালু করলেও ক্রাউডট্যাঙ্গেল সেবা বন্ধের ক্ষতি পূরণ হবে না।
ক্রাউডট্যাঙ্গেলের জন্য গবেষকদের শোক
ক্রাউডট্যাঙ্গেল ২০১১ সালে ব্র্যান্ডন সিলভারম্যান এবং ম্যাট গারমুর তৈরি করেছিলেন। তাঁরা সিএনএনসহ একাধিক ডিজিটাল প্রকাশকদের কাছে তাঁদের এই সেবা গ্রহণের প্রস্তাব করেছিল। ফেসবুক (বর্তমান মেটা) ২০১৬ সালে এই ডেটা ট্র্যাকিং টুলটি কিনে নেয়; গবেষক এবং অন্যান্য মিডিয়া অংশীদারদের এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেয়। যা ছিল প্রথমবারের মতো একটি বড় সামাজিক নেটওয়ার্ক রিয়েল টাইমে প্রবণতা নিরীক্ষণের টুল।
এটির মাধ্যমে ভাইরাল মিথ্যা বিষয়বস্তু ট্র্যাক করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর ছিল গবেষক এবং সাংবাদিকদের জন্য। কোভিটসহ অন্য বেশকিছু ক্ষেত্রে এই টুল ভুল তথ্য রোধে দারুণ ভূমিকা পালন করেছিল। বছরের পর বছর ধরে ক্রাউডট্যাঙ্গেল ব্যবহার করে আসছিলেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং কোম্পানি।
মেটার এই সিদ্ধান্তের পর দ্য কোয়ালিশন ফর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেকনোলজি রিসার্চ সম্প্রতি ‘রেস্ট ইন পিস ক্রাউডট্যাঙ্গেল’ নামে একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করেছে, যা টুলের সাহায্যে করা কাজকে স্মরণীয় করে রাখবে। অন্যান্য গবেষক এবং ওয়াচডগরাও ক্রাউডট্যাঙ্গেলের ক্ষতির জন্য শোক করছেন।