‘ক্ষতিকর’ গাছ ভালো কাজে ব্যবহার
বিভিন্ন কারণে এক দেশ বা অঞ্চলের গাছ অন্য কোথাও গিয়ে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলোকে বলে ইনভেসিভ প্ল্যান্ট৷ বিভিন্ন দেশের মানুষ এসব গাছকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজছে। যেমন, ভারতে ল্যান্টানা গাছ দিয়ে হাতির ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে। আফ্রিকা, বিশেষ করে ঘানায় কচুরিপানা দিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার হয় এমন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। অন্য জায়গায় এমন গাছ দিয়ে অর্গানিক সার তৈরি হচ্ছে। ফ্রান্সের এক বিজ্ঞানী এমন এক গাছ থেকে ক্যাটালিস্ট তৈরি করেছেন যেটা কসমেটিক ও ওষুধ গবেষণায় ব্যবহার হতে পারে।
দক্ষিণ ফ্রান্সের রন নদী এলাকায় জন্মানো ইনভেসিভ প্ল্যান্ট জাপানিজ নটউইড। রসায়নবিদ ক্লদ গ্রিসঁ এই গাছের সন্ধান পেয়েছেন। নিয়ন্ত্রণে না রাখলে এটি অনেক ক্ষতিকর হতে পারে। গ্রিসঁ বলেন, ‘অন্যান্য গাছের তুলনায় এটা তিন থেকে চারগুণ দ্রুত বাড়ে। ফলে এই এলাকার জীববৈচিত্র্যে চাপ তৈরি হয়। পরিবেশের কথা বিবেচনা করলে এটা একটা বিপর্যয়। অর্থনীতির কথা ভাবলেও তাই, কারণ এগুলো একটা উপনদীকে ধ্বংস করে, যার রন নদীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার কথা ছিল।’
এই গাছ সমূলে উৎপাটন করে ফেলা যেত, কিন্তু গ্রিসঁ একে ভালো কাজে ব্যবহারের একটি উপায় বের করেছেন। তিনি ওই গাছ থেকে প্রাকৃতিক ক্যাটালিস্ট বের করেছেন, যেটা ওষুধ নিয়ে গবেষণা ও কসমেটিক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। কারণ, এই গাছ নতুন মলিকিউল তৈরির জন্য যে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তার গতি অনেক দ্রুত করতে পারে।
ক্লদ গ্রিসঁ অনেকদিন ধরেই গাছের অবিশ্বাস্য ক্ষমতা নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে ফ্রান্সের ওভারসিজ টেরিটরি নিউ ক্যালেডোনিয়ার স্থানীয় প্রজাতির গাছ নিয়ে একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে গবেষণা করেছিলেন তিনি।
গ্রিসঁ বলেন, ‘নিউ ক্যালেডোনিয়ায় আমি বেশ কিছু প্রজাতির গাছ খুঁজে পেয়েছিলাম যেগুলো দূষণ সহ্য করতে পারে। এমনকি তারা তাদের আশপাশ থেকে ক্ষতিকর ধাতু সংগ্রহ করে নিজেদের পাতায় জমা করে রাখতে পারে। ফলে এসব গাছ দিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া মাটির গুণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
গ্রিসঁ ফ্রান্সে ইনভেসিভ প্ল্যান্ট নিয়ে কাজ করছেন। কিছু প্রজাতির গাছ আছে যেগুলো দিয়ে দূষিত পানি বিশুদ্ধ করা যায়। আর জাপানিজ নটউডের মতো গাছকে এখন গবেষণাগারে প্রক্রিয়াজাত করে শিল্পখাতে ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে।