প্রতিরক্ষায় পয়সা ঢালছে ইউরোপ, সুবাতাস স্টার্টআপে

প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপ। ফলে জার্মান প্রতিরক্ষা খাতের কয়েকটি স্টার্টআপ আগামী দিনে ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা দেখছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পেরিয়ে কতটা এগোতে পারবে সেগুলো?
জার্মানির স্টার্টআপ জগতের অনেক তারকা প্রতিরক্ষা খাতে নবাগত। ইউরোপে ক্রমশ বেড়ে ওঠা নিরাপত্তাহীনতা তাদেরকে সাম্প্রতিক সময়ে এক বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু এই রেকর্ড বিনিয়োগ কতটা কাজে লাগবে?
এআরএক্স রোবোটিক্স ক্ষুদ্রাকৃতির ট্যাংক তৈরি করেছে। শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে লেজার-সমৃদ্ধ এই যন্ত্রটি আহত সেনার পরিস্থিতিও মূল্যায়ন করতে পারে। নবীন এই প্রতিষ্ঠানটিতে সম্প্রতি ৩৩ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছেন একদল ব্যবসায়ী।
এআরএক্স রোবোটিক্স-এর সিইও মার্ক উইটফেল্ড বলেন, ‘‘আমি যা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা হচ্ছে ইউক্রেনের যুদ্ধই যথেষ্ট নয়। ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক এক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করেছে। ইউরোপ বুঝতে পেরেছে যে প্রতিরক্ষা ইস্যুতে তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করার উপায় নেই।’’
কোয়ান্টাম সিস্টেমসের এক লাখ আশি হাজার ইউরো মূল্যের ড্রোনের মতো এই ড্রোনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। তবে সামরিক বাহিনীগুলো এসব কিনবে কি না, তা নিশ্চিত না হয়েই উৎপাদন শুরু করেছে স্টার্টআপটি।
কোয়ান্টাম সিস্টেমস-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মার্টিন কারকোর বলেন, ‘‘আমরা নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নেই। আমরা বিক্রির বড় চুক্তির জন্য অপেক্ষার চেয়ে ক্রেতাদের পরামর্শ, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বাজারের হালচাল ও ইউক্রেন থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে বাজারের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করি।’’
উচ্চপ্রযুক্তির ড্রোনটি একটি নতুন জার্মান সফটওয়্যার টিমের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য স্টার্টআপের মতো হ্যাটেক-ও জানে যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো উদ্ভাবন দ্রুত করতে পারলে তা বাড়তি সুবিধা দেয়। গতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যাটেক-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরিয়ান স্মিডট বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষেত্রে বিশেষ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এমনভাবে কোনো কিছু উদ্ভাবন করা, যা ছাড়পত্র পাওয়ার নীতিমালাও অনুসরণ করবে। আমরা মূলত উড়ন্ত ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি। অবশ্যই এক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড রয়েছে, যা আমাদের অনুসরণ করতে হয়। অন্যদিকে, এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় না যে প্রচলিত পদ্ধতি তা যত দ্রুত সম্ভব বুঝতে পারবে। ফলে আমরা উভয় সংকটে পড়ি।’’
জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কিছু কিনতে কয়েক বছর লেগে যায়, যা স্টার্টআপগুলোর জন্য সুবিধাজনক নয়। একটি সিদ্ধান্ত নিতে যে সময় দরকার হয়, সেই সময়ের মধ্যে অনেক স্টার্টআপের অর্থসংকট শুরু হয়ে যায়। আর এসব পণ্যের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীই মূলত প্রথম ক্রেতা।
ইউনিভার্সিটি অব দ্য বুন্ডেসভার-এর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ইউলিয়ান ভের্নার বলেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই স্টার্টআপগুলো অর্থ আয় করতে পারে না। মানে, তারা বিনিয়োগকারীদেরকেও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আরও অর্থ দিতে বলতে পারে না। আর এ কারণেই আমাদের নতুন কর্মপন্থা বের করা দরকার।’’
নতুন কর্মপন্থার আরেকটি দিক হচ্ছে, পণ্যের সব খুচরা যন্ত্রাংশ জার্মানি বা ইউরোপে প্রস্তুত করতে হবে। বর্তমানে অনেক কিছু বাইরে থেকে আসে, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সুবিধাজনক নয়।
ইউলিয়ান ভের্নার বলেন, ‘‘বিশেষ করে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা এমন সব দেশের উপর নির্ভর করতে পারি না, যারা কৌশলগতভাবে প্রতিপক্ষ। এটা হবে ভয়াবহ এবং অদূরদর্শী ব্যাপার। ফলে আমাদের সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো এবং উৎপাদন দ্রুত ইউরোপে নিশ্চিত করতে হবে।’’
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সহায়তায় উদ্ভাবনকে পূর্ণতা দিতে হবে। এতে করে কর্মপন্থা আরও কার্যকর হবে এবং জার্মানির স্টার্টআপগুলোরও ব্যবসা বাড়বে।