কম্পিউটার কিবোর্ডের অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকে কেন?

কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের দিকে তাকালেই আমরা একটি বিষয় লক্ষ করি যে, কিবোর্ডে ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষরগুলো A, B, C, D এভাবে পরপর সাজানো থাকে না। 'A'এর পর 'B' না হয়ে কেন থাকে 'S'? আবার 'B' থাকে অনেকটা দূরে, 'V' এর পাশে! এই 'ছন্নছাড়া' বিন্যাসটিই বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত QWERTY ফরম্যাট নামে পরিচিত।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে কেন এমন অদ্ভুত বিন্যাস ব্যবহার করা হয় এবং A, B, C, D পরপর সাজানো থাকলে টাইপিং করতে সমস্যা কী ছিল?
আবিষ্কারের প্রথম পর্ব: যখন সব ছিল সরল
টাইপরাইটার আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলস প্রথম যখন কিবোর্ড তৈরি করেন, তখন সেখানে অক্ষরগুলো A, B, C, D ক্রম মেনেই সাজানো ছিল। প্রথমদিকে সরল এই বিন্যাসটিই ব্যবহৃত হচ্ছিল। কিন্তু টাইপরাইটারের ব্যবহার বাড়তে থাকলে এবং মানুষ দ্রুত টাইপ করা শুরু করলে এক বিরাট সমস্যা দেখা দেয়।
সমস্যা যেখানে শুরু: টাইপরাইটারের জট
A, B, C, D ক্রমানুসারে সাজানো কিবোর্ডে দ্রুত টাইপিং করার সময় টাইপরাইটারের সূঁচগুলো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যেত। এর কারণ ছিল, যেসব অক্ষর ঘন ঘন একসঙ্গে ব্যবহার করা হয় (যেমন: 'TH' বা 'SH'), সেগুলোকে খুব কাছাকাছি রাখা হয়েছিল। ফলে দ্রুত টাইপ করার সময় সূঁচগুলো আটকে গিয়ে টাইপিং এ সমস্যা সৃষ্টি করত।
সমাধান: জন্ম নিল QWERTY
টাইপিংকে সুবিধাজনক এবং সহজ করার জন্যই অক্ষরগুলোর বিন্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়ে। টাইপরাইটারের সূঁচ আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য, ঘন ঘন একত্রিত হওয়া অক্ষরগুলোকে একে অপরের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ব্যর্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৮৭০-এর দশকে এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় QWERTY বিন্যাসটি। এই বিন্যাসে অক্ষরগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে দ্রুত টাইপ করলেও সূঁচগুলো জট পাকানোর সুযোগ কম থাকে।
অন্যান্য ব্যর্থ মডেল
কিবোর্ডে অক্ষর সাজানোর জন্য পরবর্তীতে ডভোরাক মডেলও চালু করা হয়েছিল। তবে সেই মডেলটিও খুব একটা সহজ না হওয়ায় এবং ততদিনে QWERTY বিন্যাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠায়, তা খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। ফলস্বরূপ, কিবোর্ডের জন্য বিশ্বজুড়ে QWERTY ফরম্যাটই চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। আর সেই থেকেই এই বিশেষ 'ছন্নছাড়া' বিন্যাস মেনে টাইপিং শিখতে হয় ব্যবহারকারীদের।