ছুটির দিনে
ঢাকেশ্বরীতে একদিন

নগরজীবনে নানা ব্যস্ততার মধ্যে আপনি বিষিয়ে উঠেছেন। তাই একটু অবসরে নগরের ভেতরে ঘুরতে চান। আর সেটা যদি হয় বিশেষ দিনে, বিশেষ অনুষ্ঠানে তবে তো কথাই নেই। তার মজাই আলাদা। সুখবর হলো, সামনেই আসছে পূজার ছুটি। এই ছুটিতে চলে আসতে পারেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। হাজারো সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য বহন করে যুগের পর যুগ ধরে আমাদের রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে ঢাকেশ্বরী মন্দির। ঢাকেশ্বরী মন্দির যেখানে দেবী ঢাকেশ্বরী অধিষ্ঠিত বলে মানা হয়। আসন্ন দুর্গাপূজা আর এ উপলক্ষে ঢালাওভাবে সাজানো হয়েছে দেশের প্রায় সবকটি মন্দির। জাতীয় মন্দির হিসেবে ঢাকেশ্বরীর ব্যাপার একটু তো আলাদা হবেই। পূজার ছুটিতে হোক কিংবা সাপ্তাহিক বন্ধের দিনই হোক, মনটাকে প্রশান্ত করতে একবার ঘুরে দেখেই আসতে পারেন ঢাকেশ্বরীর দেবীর মন্দির। জাতীয় পরিচিতি অনুযায়ী এই এলাকার নাম ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নামেই। প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, রাজা বল্লাল সেন ১২০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির। পরবর্তীকালে মন্দিরটিকে এর তাৎপর্য বিবেচনা করে জাতীয় মন্দির হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মূল ফটক : ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ঢোকার সময়েই আপনাকে স্বাগত জানাবে একটি রাজফটক। রাজ দরবারের মতো উঁচু আর প্রশস্ত ফটকটি মনে হবে যেন দুই হাত বাড়িয়ে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
দুর্গা মন্দির : ঢোকার পরেই হাতের ডানদিকে পাবেন ঢাকেশ্বরীর মূল মন্দির। এই মন্দিরের মূল ফটক দুটি। তবে সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ মাঝখানের গেটটি দিয়েই মন্দিরে প্রবেশ করে। গেটটি দিয়ে প্রবেশ করলেই আপনি পা রাখবেন নাটমন্দিরে। নাটমন্দিরের সোজাসুজি দেখতে পাবেন দুর্গা দেবীর প্রতিমা। নানা রকম অলংকারে সুসজ্জিত প্রতিমা আর দেবীর মুখ দেখলে নিমিষেই মুক্তি পেয়ে যাবেন সব মানসিক চাপ থেকে আর পাবেন সব বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার আত্মবিশ্বাস।
সন্তোষী মন্দির : মাঝখানের গেট দিয়ে বের হওয়ার পরই ডানদিকে চোখ ঘুরিয়ে পাবেন সন্তোষী মায়ের মন্দির। ওপরে গম্বুজবিশিষ্ট মন্দিরের ভেতরে ঢুকলেই দেখবেন সন্তোষী দেবীর প্রতিমা। পাবেন ধূপ আর কর্পূরের গন্ধ যাতে আপনি মেতে উঠবেন এক অন্যরকম অনুভূতিতে। এর সঙ্গেই রয়েছে চারটি শিবমন্দির।
পুকুর : ঢাকেশ্বরীর সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা যোগ করেছে ঢাকেশ্বরীর পুকুর। পরিচ্ছন্ন এই পুকুরটিতে দর্শনার্থী বা ভক্তরা ভোগ দিয়ে থাকেন। পুকুরটির চারপাশ বাঁধাই করা। পুকুরে ছোট-বড় কিছু মাছও রয়েছে।
বাগান : কালক্রমে মন্দিরের সংস্কার আর সৌন্দর্যবর্ধনে ঢাকেশ্বরীর বাগানটির গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ লাগিয়ে বাগানটিকে করা হয়েছে সমৃদ্ধ আর মন্দির পেয়েছে এক অন্যরকম শোভা।
মেলাস্থল : মন্দিরের মাঝখানের যেই বিশাল জায়গাটি দেখতে পাবেন সেটিকে বিভিন্ন সময় মেলার জন্য ব্যবহার করা হয়।
প্রশাসনিক ভবন : মন্দিরের পাশেই রয়েছে সুবিশাল ভবন যা কিনা মন্দিরের প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হয়। এখানে রয়েছে কোষাগার, ভাড়ার ঘরসহ অনেক কিছু। প্রায় ৫০০ বইয়ের সংগ্রহসহ প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় আছে একটি লাইব্রেরি। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। এটিকে সভাকক্ষ হিসেবেই ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া রয়েছে জুতা রাখার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। মূল ফটকের বাইরে রয়েছে কিছু জায়গা যেখানে রয়েছে দুটি দোকান। এখান থেকে পেয়ে যাবেন পূজার উপকরণ।
পূজার সময় : ঢাকেশ্বরীতে প্রতিদিনই সকাল, দুপুর ও বিকেল তিনবেলা দুর্গা দেবীর পূজা হয়। দেওয়া হয় ভোগ এবং ভক্তরা পান প্রসাদ। আরতি হয় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায়।
প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টায় হয় সন্তোষী মায়ের পূজা। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় শনি পূজা, রোববার বিকেল ৫টা থেকে হয় কীর্তন হরি সেবা এবং প্রতি সোমবার করা হয় শিব পূজা।
কীভাবে যাবেন : রিকশা, বাস অথবা সিএনজি যেকোনো একটাতে চড়েই যেতে পারেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মিরপুর থেকে বিকল্প বা সেফটি পরিবহনে করে সরাসরি যেতে পারবেন ঢাকেশ্বরী। ভাড়া ২৫ টাকা। এ ছাড়া যারা শাহবাগ, গুলিস্তান এসব জায়গা থেকে যাবেন তারা রিকশায় করেই যেতে পারেন। ভাড়া দরদাম করে নেওয়াই ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে মন্দির সব সময় খোলা থাকে না। শুধু পূজার সময়গুলোতে যাওয়াই ভালো।
কী খাবেন : প্রতিদিনই মন্দিরে প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়। তবে প্রসাদ খেতে হলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে পূজা শেষ হওয়ার। এ ছাড়া বাইরের দোকানে পাবেন সন্দেশ, খই, মিষ্টিসহ অনেক কিছু।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য রীতি, গঠনবিন্যাস, শিল্পচাতুর্য মন্দিরটির সামগ্রিক দৃশ্যকে এতই মাধুর্যমণ্ডিত করে তুলেছে যে এর চেয়ে সুন্দর, নয়নাভিরাম মন্দির আপনি বাংলাদেশের অন্য কোথাও হয়তো দেখতে পাবেন না। এই ছুটিতে যদি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে মন্দিরটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখে ফেলুন। যতটা সময় আপনি এই মন্দিরে কাটাবেন, তা নিতান্ত বৃথা যাবে না।