শীতে ঢাকার কাছেই ঘুরতে যাওয়ার ৭ মনোরম স্থান
চিরাচরিত যান্ত্রিকতায় পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে শহরের বাইরে বনভোজনে যাওয়ার সময় পাওয়া বেশ দুষ্কর। ব্যস্ততম শহর ঢাকার নিরন্তর বাড়তে থাকা ভিড়ে বেড়ানোর জায়গাগুলো সবসময়ই থাকে কোলাহলপূর্ণ। সেখানে সবুজে ঘেরা ছায়া ঢাকা পরিবেশে বা নদীর ধারে বনভোজন অসম্ভব ব্যাপার।
তবে,নগরবাসীর এই চাহিদা পূরণ করতে পারে ঢাকার উপকণ্ঠে গড়ে ওঠা পিকনিক স্পটগুলো। সপ্তাহান্তের ছুটিতে দারুণ ভাবে কাটানো যেতে পারে পুরো একটি দিন। অস্থিরতার সাময়িক অবসানে একটু শান্তির নিমিত্তে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারেন ঢাকাবাসী। আর সেই পরিকল্পনার সহায়ক হতেই ঢাকার কাছেই সাত চমৎকার জায়গা ।
সোনারগাঁও পানাম নগর
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত হওয়া বাংলাদেশের সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এই শহরটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। সোনারগাঁও লোক-শিল্প ও কারুশিল্প জাদুঘর, গোয়ালদী মসজিদ এবং সোনারগাঁয়ের অন্যান্য আকর্ষণগুলো দেখতে দেখতে সারাটা দিন কেটে যাবে।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত অঞ্চলটি সপ্তাহের ৬ দিন উন্মুক্ত থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। শুধুমাত্র রবিবার বন্ধ থাকে পানাম নগর। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই আপনি চাইলে এই ঐতিহাসিক স্থানটি ঘুরে বেড়াতে পারেন পরিবার পরিজন নিয়ে। গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের পথে মোগরাপাড়া হয়ে হাতের বাঁ দিকে কিছু দূর এগোলেই পৌঁছানো যায় পানাম নগরে।
মৈনট ঘাট
প্রমত্তা নদী পদ্মার সাগরসম রূপের জন্য স্থানীয়দের কাছে এই মৈনট ঘাট মিনি সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত। এখানে আসার পথে নবাবগঞ্জের পথে দেখে নেয়া যেতে পারে নবাবগঞ্জের জজবাড়ি, আনসার ক্যাম্প, কোকিলপ্যারি দালান, উকিলবাড়ি, খেলারাম দাতার বাড়ি বা আন্ধার কোঠার মত ঐতিহাসিক কিছু দর্শনীয় স্থান।
লক্ষ্য যখন পদ্মার পাড়, তখন দর্শনার্থীদের সবারই মধ্যে হিড়িক পড়ে যায় ইলিশ ভাজা খাওয়ার। এছাড়া কার্তিকপুর বাজারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ও বান্দুরা বাজারের চারা বিস্কুট কিনে নিতে তারা ভোলেন না। গুলিস্তান থেকে বাবু বাজার সেতু পার হয়ে দোহারের পথে এগোলে রাস্তা গিয়ে শেষ হয় মৈনট ঘাটে। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বসিলা সেতু দিয়েও ওঠা যায় দোহারের রাস্তায়।
জিন্দা পার্ক
নৌকা বাইচ, লাইব্রেরি, কৃত্রিমভাবে তৈরি খিলান-সুড়ঙ্গ এবং পদ্ম পুকুর; কোন কিছুরই ঘাটতি নেই ঢাকাবাসীদের প্রিয় জিন্দা পার্কে। পরিবারকে নিয়ে পিকনিক করার জন্য একটি আদর্শ জায়গা এই পার্কটি। ১৯৮০ সালে জিন্দা গ্রামের অগ্রপথিক পল্লী সমিতির ৫০০০ অধিবাসী দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে গড়েছেন এই অপূর্ব পার্কটিকে।
পার্কে ঘোরার সময় গাছের ওপর দেখা যাবে টং ঘর, মাটির ঘর, সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর লাইব্রেরি ও ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানা। পার্কের লেকে নৌবিহারের জন্য সাজানো আছে আটটি নৌকা। কুড়িল হাইওয়ে ধরে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যেয়ে বাঁয়ে বেশ খানিকটা ভেতরে গেলেই পাওয়া যাবে জিন্দা পার্ক। এখানে প্রবেশ টিকেট জনপ্রতি ১০০ টাকা। লাইব্রেরির প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।
আহসান মঞ্জিল
ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে প্রভাবশালী জমিদার পরিবারের সাক্ষী হয়ে আছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেষা এই গোলাপী প্রাসাদটি। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পর্যটকরা যেন নিজেদের আবিষ্কার করেন প্রাচীন কোন নগরীতে।
এক সময়ের পুরনো ঢাকার সবচেয়ে উচু ভিত্তির ওপর স্থাপিত এই দালানটি ১৯৯২ সাল থেকে জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জাদুঘরটি ঘুরে বেড়াতে ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। শুধু শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া বৃহস্পতিবারসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে এই দর্শনীয় জায়গাটি।
লালবাগ কেল্লা
পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত বিধায় প্রাচীন ঢাকার এই দুর্গটির নামকরণ করা হয়েছে লালবাগ কেল্লা হিসেবে। মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্দান্ত এই শৈল্পিক স্বাক্ষরটি ঔরঙ্গাবাদ দুর্গ নামেও পরিচিত। তিনটি দালানে পরিবেষ্টিত দুর্গের কেন্দ্রীয় এলাকাটি। পূর্বে দিওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম, পশ্চিমে মসজিদ। আর এই দুয়ের মাঝখানে পরী বিবির সমাধি।
সুন্দর ফোয়ারার একটি জলধারা তিনটি ভবনকে সংযুক্ত করেছে। পুরো স্থাপনাটি অবস্থিত বুড়িগঙ্গা নদী তীরের সমৃদ্ধ লাল মাটিতে। কেল্লা রবিবার বাদে প্রতিদিনি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মাঝে দুপুর ১টা থেকে দেড়টা আধঘন্টা বন্ধ থাকে। এছাড়া যেকোনো সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে লালবাগ কেল্লা।
গোলাপ গ্রাম
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুরে তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত গোলাপ ফুলের এক বিস্ময়কর রাজ্যের নাম গোলাপ গ্রাম। এখানকার লাল, হলুদ ও সাদাসহ রঙ-বেরঙের গোলাপগুলো যেকোনো পর্যটকের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। রাজধানীতে গোলাপ ফুল যোগানের একটি বিরাট অংশ পুরণ করে এই গ্রামটি। গোলাপের ক্ষেত্রে মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা সরু পথ নিমেষেই ভুলিয়ে দেবে শহরের যত কোলাহল।
এখানকার শ্যামপুর গ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় বসে গোলাপের জমজমাট হাট। সেখানকার আবুল কাশেম বাজার ছাড়াও মোস্তাপাড়ার সাবু বাজারের সন্ধ্যাগুলো প্রতিদিনি মুখরিত থাকে ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনায়। ঢাকা থেকে বিরুলিয়ায় সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। তবে মিরপুর ১-এর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে নৌকা ভ্রমনটি সবচেয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রা।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
ঢাকা নগরবাসীর বনভোজনের জন্য সেরা জায়গা হলো গাজীপুর। আর সেই গাজীপুরের প্রধান আকর্ষণ হলো এই ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। এখানে আছে চিড়িয়াখানা, ভাওয়ালের প্রাচীন গাছ শালের বন এবং একাধিক পিকনিক স্পট। চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে বাঘ, চিতাবাঘ, মেছোবাঘ, হাতি, ময়ূর ও হরিণের। থাকার জন্য আছে ১৩টি কটেজ এবং ৬টি বিশ্রামাগার। যাওয়ার জন্য আগে ভাগেই বুকিং দিয়ে নিতে হবে। ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পেরিয়ে ময়মনসিংহ রুটে একদম ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গেটের সামনে নামা যায়।