অভিশংসিত হওয়ার পর যা বললেন ট্রাম্প

তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হওয়ার পরই টুইটারে সরব হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ সময় আজ সকাল ১০টার দিকে টুইটবার্তায় নিজের একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। ওই ছবিতে লেখা, ‘বাস্তবে তাঁরা আমার পেছনে নয়, বরং আপনাদের পেছনেই লেগেছে। আমি মাঝখানে রয়েছি মাত্র।’
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের পোস্ট করা ওই ছবি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তোলপাড় চলছে।
এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে দুটি অভিযোগে অভিশংসন হন ট্রাম্প। এবার আগামী মাসে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে হবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদের ভাগ্য নির্ধারণ। তবে আগে থেকেই নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি।
এদিকে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার ঠিক আগে নিম্নকক্ষের স্পিকারের কাছে কড়া ভাষায় চিঠি লেখেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। ওই চিঠিতে ট্রাম্প অভিশংসন প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানান এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা’ করার দায়ে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে অভিযুক্ত করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার পেলোসির কাছে ছয় পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, ‘আপনি অভিশংসন নামের নোংরা শব্দটির গুরুত্বকে খেলো করে ফেলেছেন।’
ট্রাম্প আরো দাবি করেন, ‘এই বানোয়াট অভিশংসনের শুরু থেকেই’ তাঁকে ‘যথাযথ সাংবিধানিক মৌলিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে’ এবং তাঁকে ‘প্রমাণ হাজির করার অধিকারসহ সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে’।
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বর্তমানে ট্রাম্পের বিরোধীরা সংখ্যাগুরু থাকায় আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে রায় আসবে, হলোও তাই। এবার বিষয়টি যাবে কংগ্রেসের ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ সিনেটে। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়টি মাথায় রেখে শুরু থেকেই তাঁকে অভিশংসন করার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে ট্রাম্প নিজে প্রতিনিধি পরিষদের অভিশংসন-সংক্রান্ত শুনানিতে অংশ নেননি এবং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদেরও অংশ নিতে দেননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনে গত নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ ইস্যুর পর আলোচনায় এসেছে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ থাকা মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের বিষয়। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দফায় দফায় শুনানি শেষে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে।
আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ প্রয়োগ করে অভিশংসন তদন্তের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টির সত্যতা ও গভীরতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পাশাপাশি হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে চলে সপ্তাহব্যাপী শুনানি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আরোপ করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। জানা গেছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকিকে বলেন, তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত বাইডেন ও তাঁর ছেলের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত রাখা হবে। ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ অনেক রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য মার্কিন সংবিধানের দুটি অনুচ্ছেদ—ক্ষমতার অপব্যবহার করা ও কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া—অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়। এ দুই অভিযোগে হয় ভোটাভুটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর ভোটাভুটি। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টার কিছু আগে ভোটাভুটি শুরু হয়। এতে পক্ষে ২৩০টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৭টি। ডেমোক্র্যাটস দলের ২২৯ জন ও স্বতন্ত্র একজন সদস্য অভিযোগের পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন ১৯৫ জন রিপাবলিকান সদস্য ও দুই ডেমোক্র্যাট সদস্য।
এর পর দ্বিতীয় অভিযোগে—কংগ্রেসের কাজ বাধাগ্রস্ত করা—ভোটাভুটি হয়। এতে পক্ষে ২১৪টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৫৬টি। অভিযোগের পক্ষে ভোট দেন ২১৩ জন ডেমোক্র্যাটস ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য আর বিপক্ষে ভোট দেন ১৫৩ রিপাবলিকান সদস্য ও তিনজন ডেমোক্র্যাটস।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে কংগ্রেসের বিতর্কটা শুরু হয় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বক্তব্য দিয়ে। প্রতিনিধি পরিষদের ওই বিতর্কে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। পেলোসি বলেন, ‘ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’