ইসরায়েলে করোনায় আক্রান্তদের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের সিদ্ধান্ত

Looks like you've blocked notifications!

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েলে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে সেখানে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো ঘটনা না ঘটলেও ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশটি। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েল সিকিউরিটি এজেন্সিকে (শিন বেট) করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা।’

নেতানিয়াহু আরো বলেন, ‘আমরা শিগগিরই এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করব।’ এসব প্রযুক্তি মূলত সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য ব্যবহার করা হয় বলেও জানান তিনি।

এ পদক্ষেপের জন্য জনগণ তাঁদের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এমন প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, বিচার বিভাগ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাদের সংস্পর্শে যাচ্ছেন এবং কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, এটি পর্যবেক্ষণের জন্যই এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এটি আক্রান্ত অন্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য কার্যকর হবে।

এরই মধ্যে ইসরায়েলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে শপিংমল, হোটেল, রেস্তোরাঁ, থিয়েটার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে ফার্মেসি, সুপারশপ, ব্যাংক খোলা থাকবে বলেও জানানো হয়। জরুরি কাজ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়। এ ছাড়া জনসমাগমস্থলে না যাওয়ার জন্য এবং ১০ জনের বেশি জমায়েত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪৭৫ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৮ জন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭৫ হাজার ৯১০ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।

এরই মধ্যে বিশ্বের ১৫৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ইউরোপের দেশগুলো রয়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। চীনের পর এখন ইউরোপ পরিণত হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রস্থলে। এর মধ্যে ইতালির পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সেখানে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৯ জনে। ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এর আগে একদিনেই এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৪৭ জনে পৌঁছেছে।

ইতালির পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে স্পেন। সেখানেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত স্পেনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯২ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৮৪৭ জনে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে স্পেনে ১৫ দিনের জন্য ওষুধসহ জরুরি কেনাকাটা বা জরুরি কাজ ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের স্ত্রী বোগোনা গোমেজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪২৩ জনে। দেশটিতে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, শপিংমলসহ বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাতে সব ধরনের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এরই মধ্যে করোনাভাইরাস রুখতে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি।

যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৩৭২ জনে পৌঁছেছে। দেশটিতে ৭০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপের সব দেশ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ৬ মে পর্যন্ত আমেরিকান এয়ারলাইনসের ৭৫ ভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্তও নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে আসা সাংবাদিকদের দেহের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ইউরোপের ২৬ দেশের সঙ্গে নতুন করে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডকে যুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সুস্থ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণ কমে এলেও দেশগুলোর সরকার জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস সফরের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

নিউজিল্যান্ডের মতো অস্ট্রেলিয়া সরকারও বিদেশি নাগরিকদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক সেলফ কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন করোনা মোকাবিলায় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

ইরানে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৩৮ বলে জানা গেছে। দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে থাকায় ধর্মীয় স্থানে জমায়েত না হয়ে নাগরিকদের বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটির পবিত্র কোম নগরীতে ইবাদতের কিছু স্থান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সীমিত চলাচলের অনুমতি থাকলেও রাজধানী তেহরানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের নির্মাণকাজ।

ফিলিপাইনে সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিবারই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হচ্ছে।