এবার বাতাস নিয়ে পাণ্ডিত্য জাহির করলেন ট্রাম্প
তিনি বরাবরই দাবি করেন, কথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট সম্বন্ধে মার্কিন সামরিক জেনারেলদের চেয়েও তিনি বেশি জানেন। শুধু তাই নয়, ‘অন্য যে কারো চেয়ে’ রাজনীতিবিদদের ভালো চেনেন বলেও তিনি দাবি করে থাকেন। এবার আরেকটি বিষয়ে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের খবর পাওয়া গেল। বলা হচ্ছে সদ্য অভিশংসিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা।
সম্প্রতি ‘উইন্ড টারবাইন’ বা বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র বিষয়ে নিজের জ্ঞান জাহির করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অবশ্য এ বিষয়ে নিজেকে অন্য যে কারো চেয়ে বেশি জ্ঞানী বোঝাতে গিয়ে ‘উইন্ড টারবাইন’কে ‘উইন্ডমিল’ বা বায়ুচালিত কল হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
সম্প্রতি তরুণ কনজারভেটিভদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘অন্য যে কারো চেয়ে এ বিষয়ে আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করেছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাতাস ব্যাপারটাকে কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি। উইন্ডমিল খুব ভালো করেই চিনি। ওগুলো আওয়াজ করে চলে, পাখিরা কাটা পড়ে। আপনি কি পাখিদের কবরস্থান দেখতে চান? কোনোদিন পারলে কোনো উইন্ডমিলের নিচটা দেখে আসবেন। সারাজীবনে যত পাখি দেখেননি, ওখানে তার চেয়ে বেশি পাখি দেখতে পাবেন।’
এক ঘণ্টার বেশি ওই বক্তব্যে ট্রাম্প নানা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কী ছিল না তাঁর বক্তব্যে? ডেমোক্র্যাটস ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি থেকে শুরু করে নিজের সাম্প্রতিক অভিশংসন, নিজ দলের বিরুদ্ধবাদীসহ অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন ট্রাম্প।
কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সামনে উঠে এসেছে উইন্ড টারবাইন নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জ্ঞানের বহর দেখে ভ্রু কুঁচকেছেন অনেকেই।
ট্রাম্প বলেন, ‘এগুলো তৈরি করার সময় প্রচুর গ্যাস সৃষ্টি হয়। বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে গ্যাস। আমাদের যে একটা বিশ্ব আছে, তা তো জানেন নাকি? মহাবিশ্বের তুলনায় এই বিশ্ব অত্যন্ত ক্ষুদ্র। আপনারা কার্বন ফুটপ্রিন্টের কথা বলেন, বাতাসে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে, তাই নয় কি? চীন বা জার্মানি, যেখানেই এই গ্যাস সৃষ্টি হোক না কেন, তা আমাদের এখানকার বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা তো আমাদের বাতাস, ওদের বাতাস, সবকিছু, ঠিক কি না?
কিন্তু এসব বলে ট্রাম্প ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা মোটেও স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া উইন্ড টারবাইন নির্মল বাতাসকে জ্বালানিতে বদলে দিয়ে বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করতে বিষাক্ত গ্যাস ছড়াচ্ছে, এমনটা কোন মাপকাঠিতে তিনি তা নিরূপণ করলেন, তাও বোঝা গেল না। তবে এগুলো দেখতে কেমন, সে বিষয়ে নিজের মতামত ঠিকই দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘[উইন্ডমিল] আপনারা দেখেছেন। বিভিন্ন রঙের হয় এগুলো। অনেকটা সাদামতো, কোনো কোনোটি কমলা-সাদা রঙের। আমার প্রিয় রং কমলা।’
বাতাস নিয়ে প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এটিই প্রথম নয়। এ বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, উইন্ড টারবাইনের জন্য জমিজমার মূল্যমান নষ্ট হয়ে যায় এবং এর আওয়াজ ক্যানসারের কারণ বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।
অবশ্য উইন্ড টারবাইনের কারণে কিছু নেতিবাচক প্রভাবের তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। ২০১৩ সালে ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি জানিয়েছিল, উইন্ড টারবাইনের কারণে প্রায় ১০ লাখ বাদুড় ও পাঁচ লাখের বেশি পাখি মারা যায়।
সবশেষে নিজেকে পরিবেশবাদী দাবি করে পরিবেশের পক্ষের লোক বলেও নিজেকে উপস্থাপন করেন তিনি। এ ছাড়া উইন্ড টারবাইনের দীর্ঘমেয়াদি নান্দনিকতার ওপরও গুরুত্ব দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি কি জানেন, উইন্ডমিলগুলো সম্পর্কে কেন আপনাদের জানানো হয় না? কারণ, ১০ বছর পর মিলগুলো নরকে পরিণত হয়। সেগুলো পুরোনো হতে থাকে। পুরোনো উইন্ডমিলের মালিকরাও সরকারি ভর্তুকি ছাড়া সেগুলো প্রতিস্থাপন করে না। এটা খুবই খারাপ একটা ব্যাপার।’