কপের প্রথম সপ্তাহ : কথা বেশি, অর্থ সামান্য!

Looks like you've blocked notifications!
মিসরের শারম আল-শেখে সিনাই পর্বতমালার পাদদেশে ও লোহিত সাগরের তীরে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপের ২৭তম আসর। ছবি : রয়টার্স

শেষ হয়েছে কপ২৭-এর প্রথম সপ্তাহের আলোচনা। নানা কারণে আলোচিত এই সম্মেলনে এখনো মেলেনি বড় অংকের অর্থের দেখা, যদিও সেখানেই দৃষ্টি সবার।

সোমবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ সপ্তাহ। মিসরের শারম আল-শেখে সিনাই পর্বতমালার পাদদেশে ও লোহিত সাগরের তীরে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপের ২৭তম আসর।

ব্যাপক উত্তেজনা নিয়ে শুরু হওয়া এই আসরের প্রথম সপ্তাহ শেষ হয় শনিবার। রোববার বিরতি দিয়ে আবার সোমবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনা ও দর কষাকষি।

প্রশ্ন হলো, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনায় এখন পর্যন্ত কী ঘটেছে এবং আমরা পরের সপ্তাহে কী আশা করতে পারি? মিসরে শীর্ষ সম্মেলনটি একটি গভীর সতর্কবার্তা দিয়ে শুরু হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সোমবার শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনে বিশ্ব নেতাদের বলেছেন পৃথিবী নামের গ্রহটির জলবায়ু সংকট এক বিশৃঙ্খল পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এবং এ থেকে ফেরার কোনো উপায় নেই। শুরুর আগেই ইউএনএফসিসিসি এক রিপোর্টে বলেছে যে, কার্বন নির্গমন কমানোর যে লক্ষমাত্রা তা থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে দেশগুলো।

সেখানে বলা হয়েছে, এখন যে অবস্থা তাতে শতাব্দী শেষে তাপমাত্রা শিল্পায়ন শুরুর যুগ থেকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখা কঠিন হবে। শুধু তাই নয়, তা আড়াই ডিগ্রিতে পৌঁছে যেতে পারে। অর্থাৎ, এখন যতটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে, তখন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হবে। কথা বেশি, অর্থ কম কপের শুরুতেই এবার একটা সাফল্য মেলে। তা হলো 'লস এন্ড ড্যামেজ' আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় যুক্ত হওয়া। অল্প কিছু অর্থও সেখানে যুক্ত হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য।

গত বছর গ্লাসগো কপের আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্য ও বর্তমান আয়োজক মিসরের করা যৌথ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ চীন ছাড়া বাকি সব উন্নয়নশীল দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রায় দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। সে হিসেবে এখনো যেসব অঙ্গীকার এসেছে তা নামমাত্র। ভেন্যুতে বিক্ষোভ সপ্তাহজুড়ে কপের ভেন্যুর বিভিন্ন স্থানজুড়ে ছোট ছোট বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্ব নেতারা চলে যাবার পর তা কিছুটা তীব্র ও রঙিন হয়। একেক দিনের থিম বা বিষয় একেক হওয়ায় প্রতিবাদকারীদের স্লোগানও সেভাবে বদলায়। তবে এবারই প্রথম তরুণদের জন্য একটি প্যাভিলিয়ান করা হয়। তরুণরা এবারের কপেও খুবই সরব, যদিও তরুণদের আইকন গ্রেটা টুনব্যার্গ এবার কপে আসেননি।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক কার্বন নির্গমন করে যে দুইটি দেশ, সেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র গতবছর নিঃসরণ কমানোর জন্য আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তাইওয়ান নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চীন আলোচনা বন্ধ করে দেয়। বিশেষ করে ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর। তবে কপে উপস্থিত চীনা ক্লাইমেট নেগোশিয়েটর জি জেনহুয়া আশ্বস্ত করেছেন তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ জলবায়ু দূত জন কেরির ‘কথা' হচ্ছে।

বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার বেশ সরব উপস্থিতি রয়েছে কপে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের উপস্থিতি যেমন রয়েছে তেমনি আমলা, বিশেষজ্ঞ, এনজিওকর্মী, জলবায়ুকর্মীসহ অনেকেই উপস্থিত আছেন। লস এন্ড ড্যামেজকে এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশি ‘নেগোশিয়েটররা' ভূমিকা রেখেছেন৷ কপ উপলক্ষে বাংলাদেশ তাদের ‘ক্লাইমেট এডাপটেশন প্ল্যান' প্রকাশ করেছে। তা বাস্তবায়নে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন এসব নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন বেশ কয়েকটি আলোচনায় যোগ দেওয়া ছাড়াও 'জীবাশ্ম জ্বালানিহীন ভবিষ্যতের জন্য আইনপ্রণেতারা' নামের একটি প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছেন। এখানে এরই মধ্যে নানা দেশের দেড়শত পার্লামেন্টারিয়ান যোগ দিয়েছেন।