করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য দুটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য দুটি প্রতিষেধকের (ভ্যাকসিন) পরীক্ষা শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালের সহায়তায় এ ভ্যাকসিনগুলো তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রাণীদের দেহে ভ্যাকসিন দুটির পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থার বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন দুটির কার্যক্ষমতা এবং মানুষের শরীরে ব্যবহার করা যাবে কি না, সে দিকটি যাচাই করে দেখবেন।
তবে এরই মধ্যে মানুষের ওপর করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ওই পরীক্ষা করা হয়। তবে কোনো প্রাণীর ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ কমনওয়েলথ বিজ্ঞান ও শিল্প কারখানা গবেষণা সংস্থা বা সিএসআইআরও বলছে, এই প্রথম কোনো প্রাণীর ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে পুরো বিশ্বে যে গতিতে সমন্বয় করা হচ্ছে, তা নজিরবিহীন।
সিএসআইআরওর ড. রব গ্রেনফেল বলেছেন, ‘আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, সেখানে পৌঁছাতে এক থেকে দুই বছর সময় লাগে। কিন্তু আমরা মাস দুয়েকের মধ্যে এখানে পৌঁছেছি।’
এ ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করবে?
অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ বিজ্ঞান ও শিল্প কারখানা গবেষণা সংস্থা বলছে, কিছুদিন ধরেই ছোট প্রাণী ও স্তন্যপায়ীদের ওপর ভ্যাকসিনের নানা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ প্রাণীগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রমাণিত।
কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এ মুহূর্তে বিশ্বে ২০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। সিএসআইআরও একটি বৈশ্বিক সাহায্য নিয়ে এ মহামারি রোধে কাজ করছে। মূলত দুটি বিকল্প ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যার নাম ভেক্টর ভ্যাকসিন। এ ক্ষেত্রে একটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ভাইরাস ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের প্রোটিনকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সন্নিবেশ করা হয়, যাতে সাড়া পাওয়া যায়।
‘কিন্তু এ ভাইরাস সংখ্যায় বাড়বে না... ফলে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগে কারো অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা নেই,’ বলছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পশু স্বাস্থ্য গবেষণাগারের অধ্যাপক ট্রেভর ড্রিউ।
ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যাল যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে, সেটিকে অধ্যাপক ট্রেভর ড্রিউ ‘ভিন্ন কিন্তু আকর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেন।
ইনোভিওর ভ্যাকসিনটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সন্নিবেশ করা হয়, যাতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাড়া দেওয়ার আগেই শরীরের কোষ আবার ওই প্রোটিন তৈরি করে।
বিশ্ব কবে ফলাফল পাবে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী জুন মাস নাগাদ প্রাণীর ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। যদি এ পরীক্ষা সফল হয়, তাহলে এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা হবে বিশ্বের অন্য কোনো ল্যাবে। এভাবে বাজারে ভ্যাকসিনটি আনার গতিও ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো ভ্যাকসিন এর পরীক্ষা ও গুণগত মানের পর্যায় উত্তীর্ণ করতে কমপক্ষে ১৮ মাস লাগে। উদাহরণস্বরূপ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনটি আরেকটি পরীক্ষাগারেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে দেখা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো প্রাণীর ওপর ভ্যাকসিনটি কতটা সফল।
এ ক্ষেত্রে ড. রব গ্রেনফেল বারবার বৈশ্বিক একাত্মতার কথাই বলছেন। তিনি বলেন, ‘(করোনাভাইরাসের সফল ভ্যাকসিন) পেতে একাডেমিক, পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর এক হয়ে কাজ করছে।’
বিশ্বজুড়ে নানা জায়গায় দ্রুত গতিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।