চিলিতে তুমুল বিক্ষোভ

পুলিশি ‘নির্যাতনের’ নিন্দা চিলির প্রেসিডেন্টের

Looks like you've blocked notifications!

প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরাকে সরাতে চেয়ে বিক্ষোভে এক মাস ধরে উত্তাল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি। বিক্ষোভ দমনে কঠোর আচরণের কারণে এরই মধ্যে চিলির পুলিশ-প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার চিলির প্রেসিডেন্ট নিজেই পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করলেন।

পূর্ব ধারণকৃত এক ভাষণে চিলির প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, দেশে বিরাজমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে গিয়ে ‘নির্যাতন’ চালিয়েছে পুলিশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এসব তথ্য জানিয়েছে।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরা বলেন, যারা অতিরিক্ত কঠোর আচরণ ও নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি যাঁরা পুলিশি অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাঁরা সুবিচার পাবেন বলেও জানান চিলির প্রেসিডেন্ট।

পাশাপাশি সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরা স্বীকার করে নেন, পুলিশের দমননীতিতে একাধিক অপরাধমূলক ঘটনাও ঘটেছে। গত এক মাসে মানুষের অধিকার সঠিকভাবে রক্ষিত হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।

হঠাৎ করেই মেট্রোর অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ দিয়ে চিলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে পরিণত হয়। সমাজের অতিরিক্ত বিত্তশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে  ক্রমবর্ধমান আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিলেন চিলির সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ। মেট্রোর ভাড়া বৃদ্ধি সে আগুনেই ঘি ঢালে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা, প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করাসহ একাধিক দাবিতে রাজধানী সান্তিয়াগোসহ চিলির বিভিন্ন শহরের মানুষ পথে নামেন। এখন পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গেছেন অন্তত ২২ জন। এ বিক্ষোভে আহত হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে চিলির সরকার গত শুক্রবার দেশটির সংবিধান পরিবর্তনের জন্য আগামী এপ্রিলে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

দীর্ঘ দরকষাকষি শেষে গত শুক্রবার সরকারি কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সমঝোতা অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য ওই গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন থাকবে— তারা সংবিধানের পরিবর্তন চায় কি না? পাশাপাশি মতামত চাওয়া হবে কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তারা সংবিধানের পরিবর্তন প্রত্যাশা করে?

স্বাক্ষরিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট ফর পিস অ্যান্ড নিউ কনস্টিটিউশন’ চুক্তি অনুযায়ী, তিনটি ভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেকোনো একটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়ে পছন্দসই ভোট দিতে পারবে চিলিবাসী। এই তিন কর্তৃপক্ষ হলো জনগণের সরাসরি ভোট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অথবা এ দুইয়ের সমন্বয়ে গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ।

চিলির বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র দায়বদ্ধ নয়। বিক্ষোভকারীরা এ দুটি বিষয়কে সংবিধানভুক্ত করতেই আন্দোলন করছেন।