প্রেসিডেন্ট থাকা নিয়ে অবিলম্বে সিনেটের সিদ্ধান্ত চান ট্রাম্প

অভিশংসিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন কি না, এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সিদ্ধান্ত জানতে উদগ্রীব ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেজন্য এর মধ্যেই সিনেটের সিদ্ধান্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এরই মধ্যে একাধিকবার টুইট করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা এই বিচার পর্যন্ত যেতে আগ্রহী নয়, কারণ তাঁদের ‘অভিযোগ অমূলক’।
টুইটে ট্রাম্প আরো বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা আমাকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হাউসে (প্রতিনিধি পরিষদ) যেতে দেয়নি। কোনো আইনজীবী নেই, সাক্ষী নেই, কিছুই নেই। তারা এখন সিনেটকে বলতে চাচ্ছে, কীভাবে বিচার পরিচালনা করা হবে। মূলত, তাদের কাছে কোনো কিছুর প্রমাণই নেই। তারা বিষয়টি থেকে সরে আসতে চায়। আমি দ্রুত বিচার দাবি করছি।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো দাবি করেন, ‘এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম শিফ, যিনি অভিশংসন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিসহ বাইডেন এবং সিআইএর হুইসেল ব্লোয়ার, যারা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তদন্ত শুরু করেছিলেন, তাঁদের ডেমোক্র্যাটরা চাইছে না।
এদিকে হাউস থেকে ট্রাম্পকে তদন্তকারীদের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
পরবর্তী ধাপে যেতে হলে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রণাধীন হাউসকে অভিশংসনের নিবন্ধ অবশ্যই সিনেটে পাঠাতে হবে। তবে হাউস স্পিকার ন্যান্সি এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত সিনেটের বিচার প্রক্রিয়ার নিয়ম ডেমোক্র্যাটদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অভিশংসনের নিবন্ধ পাঠানো হবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনে গত নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ ইস্যুর পর আলোচনায় এসেছে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ থাকা মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের বিষয়। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দফায় দফায় শুনানি শেষে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে।
আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ প্রয়োগ করে অভিশংসন তদন্তের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টির সত্যতা ও গভীরতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পাশাপাশি হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে চলে সপ্তাহব্যাপী শুনানি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আরোপ করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। জানা গেছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকিকে বলেন, তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত বাইডেন ও তাঁর ছেলের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত রাখা হবে। ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ অনেক রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য মার্কিন সংবিধানের দুটি অনুচ্ছেদ ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করা ও কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া’ অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়। এ দুই অভিযোগে হয় ভোটাভুটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর ভোটাভুটি। বাংলাদেশ সময় গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার কিছু আগে ভোটাভুটি শুরু হয়। এতে পক্ষে ২৩০টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৭টি। ডেমোক্র্যাটস দলের ২২৯ জন ও স্বতন্ত্র একজন সদস্য অভিযোগের পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন ১৯৫ জন রিপাবলিকান সদস্য ও দুই ডেমোক্র্যাট সদস্য।
এরপর দ্বিতীয় অভিযোগে ‘কংগ্রেসের কাজ বাধাগ্রস্ত করা’ ভোটাভুটি হয়। এতে পক্ষে ২১৪টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৫৬টি। অভিযোগের পক্ষে ভোট দেন ২১৩ জন ডেমোক্র্যাটস ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য আর বিপক্ষে ভোট দেন ১৫৩ রিপাবলিকান সদস্য ও তিনজন ডেমোক্র্যাটস।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে কংগ্রেসের বিতর্কটা শুরু হয় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বক্তব্য দিয়ে। প্রতিনিধি পরিষদের ওই বিতর্কে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। পেলোসি বলেন, ‘ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’