বিশ্ব বাণিজ্যে সাম্প্রতিক মন্দার মধ্যেও সবুজ পণ্যের চাহিদা বেশি ছিল : জাতিসংঘ

Looks like you've blocked notifications!
জাতিসংঘের পতাকা। ছবি : রয়টার্স

২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতি কমেছে, কিন্তু পরিবেশ বান্ধব পণ্যের চাহিদা শক্তিশালী ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (আঙ্কটাড) এ তথ্য জানিয়েছে।

আঙ্কটার্ডের সর্বশেষ গ্লোবাল ট্রেড আপডেট অনুসারে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ‘সবুজ পণ্যের’ (কম সম্পদ ব্যবহার করে এবং কম দূষণ করে) বাণিজ্য চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২২ সালে রেকর্ড এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

রিপোর্টের অন্যতম লেখক আঙ্কটাডের অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রো নিসিতা বলেছেন, ‘পৃথিবীর জন্য এটি সুসংবাদ, কারণ এই পণ্যগুলো পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল চাবিকাঠি।’

২০২২ সালে ভাল ব্যবসা করা সবুজ পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহন, নন-প্লাস্টিক প্যাকেজিং এবং বায়ু টারবাইন।

আন্তসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) তার ফ্ল্যাগশিপ রিপোর্টে বলেছে, তাপমাত্রা এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে এখন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক কমাতে হবে বলে প্রাক-শিল্প পর্যায়ে ফিরে যেতে হবে।

সামগ্রিকভাবে ২০২২ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের মূল্য ৩২ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির ফলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। আঙ্কটার্ডের মতে, বাণিজ্যের ভবিষ্যত ‘অনিশ্চিত’ রয়ে গেছে।

জাতিসংঘের এই সংস্থাটি উদ্বেগের কারণ হিসেবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, উচ্চ দ্রব্যমূল্য এবং উচ্চ সুদের হারের সঙ্গে সরকারি ঋণের রেকর্ড মাত্রার কথা উল্লেখ করেছে।

আঙ্কটার্ডের পূর্বাভাস বলেছে যে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য স্থবির হতে চলেছে। তবে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ‘ইতিবাচক’ হতে পারে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আঙ্কটাড বলেছে, সবুজ পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা টিকিয়ে রেখেছে। যদিও এগুলো জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত আঙ্কটাড এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রতিবেদনে এই মুহূর্তটিকে ‘সবুজ প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, বৈদ্যুতিক গাড়ি, সৌর ও বায়ু শক্তি, সবুজ হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে চারগুণ বেড়ে দুই দশমিক এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

আঙ্কটাড আরও বলেছে, উন্নত দেশগুলো সবুজ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশির ভাগ অর্থনৈতিক সুযোগগুলো দখল করছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নীতির বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়ায় বা দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরিতে বিনিয়োগের অভাবের কারণে এই সবুজ প্রযুক্তির ধারায় তাল না মেলাতে পারাটা দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে।’

আঙ্কটাড রিপোর্টে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নিয়ম এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে উদীয়মান সবুজ শিল্পকে সমর্থন করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো ‘পৃথিবীকে রক্ষা করতে সাহায্য করার সময় অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে।’