রোহিঙ্গা নিপীড়নের সত্যতা উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি আইসিসি কৌঁসুলির

Looks like you've blocked notifications!

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নিপীড়নের সত্যতা উন্মোচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত- আইসিসির কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এসময় ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সুবিচার পাইয়ে দিতে তদন্ত কাজে সব পক্ষের সহায়তা চান আইসিসির এই কৌঁসুলি।

বিবৃতিতে বেনসুদা বলেন, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কৌশলে নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে মনে করে আইসিসি। একইসঙ্গে বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়ে থাকতে পারে বলেও বিশ্বাস করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।

বেনসুদা আরো জানান, এসব বিষয়ের আলোকেই মিয়ানমার ও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে তদন্ত পরিচালিত হবে। গত ১৪ নভেম্বর  নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আইসিসির এক রায়ে, রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা তা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার ব্যাপারে আইসিসি বাংলাদেশে অফিস খুলে তদন্ত শুরু করবে। তার প্রক্রিয়া এখন চলছে। তদন্তের অনুমতি পাওয়ার পর এ নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছে। তাতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ।

এর আগে গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি গাম্বিয়ার নাগরিক ফাতোও বেনসুদা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরুর জন্য বিচারকদের অনুমতি চান। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়া দেশ মিয়ানমার এ আর্জাতিক আদালতের সদস্য না হওয়ায় তিনি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশে তদন্ত চালাতে চান। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসির মাধ্যমে মিয়ানমারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন মানবাধিকারকর্মীরা ২০১৭ সাল থেকেই। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের বাধার কারণে তা ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় জাতিসংঘকে। তবে জাতিসংঘের নিরাপদ পরিষদ গত ১৪ নভেম্বর রাখাইন জনগোষ্ঠির ওপর পরিচালিত গণহত্যার তদন্তের অনুমোদন দেয়।

আইসিসির কর্মকর্তারা আগামী মাসে বাংলাদেশে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কাজের প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো সুরাহার জন্য গত সপ্তাহে আইসিসি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। আইসিসি কক্সবাজার ও ঢাকায় দপ্তর চালু করে স্বাধীনভাবে তদন্তের কাজটি করবে।

রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাখাইনে ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। অত্যন্ত শোচনীয় পরিস্থিতিতে যাদের বসবাস করতে হচ্ছে।