রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে মিয়ানমারে কোর্ট মার্শাল শুরু
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সেনাদের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে বিচার বা কোর্ট মার্শাল শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
তদন্তের পর গতকাল মঙ্গলবার নিজস্ব আদালতে এই বিচার শুরু করার কথা নিশ্চিত করেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জাও মিন তুন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জাও মিন তুন জানান, গু দার পিন নামের একটি গ্রামে নিয়োজিত যেসব সেনাসদস্য সামরিক নির্দেশ পালন করেনি, তাদের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে এই কোর্ট মার্শাল শুরু করল দেশটি।
রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ তুলে গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলার শুনানি চলবে আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর। শুনানিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে এসব মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার।
ঠিক এমন প্রেক্ষাপটেই সামরিক আদালতে বিচার শুরু করার কথা জানাল মিয়ানমার। এ বিষয়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছে, গু দার পিনে দুর্ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সামরিক আইনে বিচার করা হচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য ও মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের গু দার পিন গ্রামে অন্তত পাঁচটি গণকবর থাকার কথা জানিয়েছিল বার্তা সংস্থা এপি, যা এত দিন অস্বীকার করে এসেছে মিয়ানমার।
এর আগে ২০১৭ সালে রাখাইনের একটি গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার দায়ে সাত সেনাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবশ্য এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই তারা মুক্তি পায়।
চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাখাইনে ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। অত্যন্ত শোচনীয় পরিস্থিতিতে তাদের বসবাস করতে হচ্ছে।