লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্য আহত

Looks like you've blocked notifications!
লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়‌’। ছবি : আইএসপিআর

লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরের একটি ওয়্যারহাউসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয়ের (বিএনএস বিজয়) ২১ সদস্য আহত হয়েছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টারে (এইউবিএমসি) ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন শান্তিরক্ষা বাহিনী কর্তৃপক্ষের (ইউনিফিল) তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুলেন্সযোগে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা আশঙ্কামুক্ত। শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌ সদস্যদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এ দুর্ঘটনায় নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয়ের বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। ইউনিফিল হেড অব মিশন ও ফোর্স কমান্ডার এবং মেরিটাইম টাস্কফোর্স কমান্ডার সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনার অব্যবহিত পরই বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমান সরেজমিনে বানৌজা বিজয় পরিদর্শন করেন এবং আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বর্তমানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ ইউনিফিলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রয়েছে। জাহাজটি লেবাননের ভূখণ্ডে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি লেবাননের জলসীমায় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ মেরিটাইম ইন্টারডিকশন অপারেশন, সন্দেহজনক জাহাজ ও এয়ারক্রাফটের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে উদ্ধার তৎপরতা এবং লেবানিজ নৌ সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ করে যাচ্ছে।

এনটিভিকে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তা

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণে বৈরুত কেঁপে উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৈরুতে বাংলাদেশের দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজনের নাম মেহেদী হাসান। অন্যজনের নাম মিজান। তাঁদের পূর্ণ পরিচয় ও বাংলাদেশের ঠিকানা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, ‘স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর থেকে আমরা যখন জানতে পেরেছি, সমুদ্রসৈকতে থাকা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন থেকেই দূতাবাস সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আহতদের পাশে রয়েছে।’

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গতকাল মঙ্গলবার ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে এবং বহু ঘরবাড়ি ও গাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। লেবাননের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান জানিয়েছেন, অত্যন্ত বিস্ফোরক রাসায়নিক পদার্থের গুদামে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

বৈরুতের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিস্ফোরণ একটি দুর্ঘটনা। পরিকল্পিতভাবে এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। তাঁরা বলছেন, গুদামে ছয় বছর ধরে মজুদ রাখা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিস্ফোরক থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এ বিস্ফোরণের ঘটনাকে বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেছেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক টু্‌ইট বার্তায় বলেছেন, কোনো গুদামে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক অনিরাপদভাবে মজুদ রাখার বিষয়টি ‘অগ্রহণযোগ্য’।