স্পেনেও করোনায় মৃতের সংখ্যার হিসেবে গরমিল
মহামারি করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ইউরোপের দেশ স্পেনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড মেনে মৃতের সংখ্যা গণনার নির্দেশ দিয়েছে।
করোনা সংকটের ক্ষেত্রে একটি বিষয় নিয়ে বেশ সংশয় তৈরি হয়েছে, তা হচ্ছে আক্রান্ত বা মৃত মানুষের সংখ্যাটা কতটা নির্ভরযোগ্য। যেমন শুধু স্পেন নয় যুক্তরাজ্য এবং চীনের প্রকৃত মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। একই অবস্থা ইরানেও। সন্দেহের যথেষ্ট কারণও অবশ্য রয়েছে, খবর জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পরীক্ষা করলেই হয়তো প্রকৃত মৃত আক্রান্তের চিত্র পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার মান, কোন পর্যায়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, এমন সব বিষয়ও বিচার করা জরুরি। মৃতের সংখ্যার ক্ষেত্রেও নানা কারণে এমন অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। ঠিক সময়ে করোনা শনাক্ত না করার কারণে সংক্রমণের হার যে মারাত্মক হারে বেড়ে যেতে পারে, ইউরোপে ইটালি ও স্পেনের মতো দেশে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে৷
স্পেনের সরকার এ ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি এড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে ক্ষমতার বণ্টনের প্রেক্ষাপটে এতদিন দেশজুড়ে মৃতদের সংখ্যা নির্ধারণের কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড ছিল না৷ শুক্রবার ফেডারেল সরকারের এক গেজেটের মাধ্যমে দেশের ১৭টি স্বশাসিত অঞ্চলের কর্তৃপক্ষকে করোনা মহামারির কারণে মৃত মানুষের সংখ্যা গণনার সাধারণ মানদণ্ড চালু করার নির্দেশ দিয়েছে৷
স্পেনের ফেডারেল সরকার জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তাই যে সব মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, একমাত্র তাদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে সরকারি তালিকায় হিসেব রাখা হবে৷ মৃত্যুর আগে কোনো মানুষের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছিল কিনা, সেটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না৷
বৃহস্পতিবার স্পেনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজারেরও বেশি৷ মৃত্যুর আগে যেসব মানুষের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেলেও পরীক্ষা করা হয় নি, তাদের সংখ্যা ধরলে মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে বাধ্য৷
যেমন স্পেনের উত্তর পূর্বে কাটালুনিয়া অঞ্চলে চলতি সপ্তাহের শুরুতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩,৭০০৷ তবে একমাত্র হাসপাতালে পরীক্ষা চালিয়ে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছিল৷ বৃদ্ধাশ্রম বা বাসায় পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়লে সরকারি হিসেবের তালিকায় মৃতদের স্থান হয়নি৷ ফলে অন্তেষ্ট্যির সময় হিসেব মেলেনি৷ একই সময়কালে আরও প্রায় ৩,২০০ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সন্দেহ থেকে গেছে৷
স্পেনের হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি কাটছে না৷ রাজ্য সরকারগুলির হিসেব অনুযায়ী এগারো হাজারের বেশি মানুষ হয় করোনা ভাইরাস বা তার উপসর্গের কারণে মারা গেছেন৷ কিন্তু প্রত্যেকটি রাজ্যে হিসেবের মানদণ্ড ভিন্ন হওয়ায় সেই সংখ্যার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷