স্পেনে বাড়ছে প্রাণহানি, মর্গের বদলে আইস রিঙ্কে রাখা হচ্ছে লাশ
স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। একদিনের মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অন্যদিনের মৃতের সংখ্যাকে। আর তাই এত সংখ্যক মানুষের লাশ রাখতে হচ্ছে আইস রিঙ্কের (স্কেটিং করার জন্য বরফের জায়গা) ওপর। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের একটি শপিং মলের আইস রিঙ্ক এরই মধ্যে পরিণত হয়েছে অস্থায়ী মর্গ হিসেবে। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্পেনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৯১ জনে। এর মধ্যে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ৬৮০ জনের। স্পেনে এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া দেশটিতে নতুন করে প্রায় সাত হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৫৮ জনে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ প্যালাসিও ডি হিয়েলো শপিং মলে নিয়ে যাচ্ছে ইমার্জেন্সি মিলিটারি ইউনিট।
মাদ্রিদ পৌর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিষেবার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ নিতে পারবে না। কারণ, তাঁদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম নেই।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিষেবাটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, লাশগুলোর দাহ ও সমাধিসহ অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবেই করা যাবে, যদি সেগুলো বন্ধ কফিনে করে অন্য কোনো পরিষেবার মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়।
মাদ্রিদ স্পেনের মধ্যে করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। মাদ্রিদ অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ইসাবেল ডিয়াজ বলেছেন, শহরটির মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।
এরই মধ্যে সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৯৩ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২৪ হাজার ৪৯ জনে। অন্যদিকে, করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে উঠেছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৮০৮ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
করোনার কারণে ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশে লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি করা হচ্ছে। ইতালিতে করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। দেশটিতে নতুন করে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। একদিনে মারা গেছে ৭৪৩ জন। দেশটিতে ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। ইতালিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮২০ জনে।
এ ছাড়া ফ্রান্সে করোনায় একদিনে মারা গেছে ২৪০ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। আর মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ শতাংশ বাসিন্দাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন করোনায় মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭২ জনে। দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার জন, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটিতে একদিনে মারা গেছে ১৯০ জন। যুক্তরাষ্ট্রে চিন্তা বাড়াচ্ছে নিউইয়র্ক শহর। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য সব অঙ্গরাজ্যের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চারজনে। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত আরো ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৯ জনে।