৬৫৮ পাতার অভিশংসন প্রতিবেদনে ‘দোষী সাব্যস্ত’ ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের ৬৫৮ পাতার প্রতিবেদনে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান জেরল্ড ন্যাডলার গতকাল সোমবার এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কেন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার বেশ কিছু কারণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ফৌজদারি অপরাধ ও টেলিফোন কেলেঙ্কারির বিষয়ও রয়েছে। জেরল্ড ন্যাডলার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড সংবিধানবিরোধী এবং তিনি মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।’ ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শও দেন ন্যাডলার।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত শুরু হয়েছিল। এবং আগামীকাল বুধবার মার্কিন হাউসে অভিশংসন প্রস্তাবে ভোটাভুটি হতে পারে।
তবে গতকাল এক টুইটবার্তায় নিজের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। তিনি এসবের জন্য ‘ভুয়া গণমাধ্যম’ ও তাঁদের সহযোগীদের দায়ী করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিতে অভিশংসনের ওপর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ২৩টি ভোট পড়ে। আর বিপক্ষে ভোট দেন ১৭ জন। তদন্ত কমিটির রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তাঁদের ভোট দেন।
এর আগে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় সেখানে ভোটাভুটিতে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষেই রায় আসবে। তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা, তাই সেখানে ট্রাম্পই টিকে যাবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনে গত নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ ইস্যুর পর আলোচনায় এসেছে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ থাকা মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের বিষয়।
আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ প্রয়োগ করে অভিশংসন তদন্তের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টির সত্যতা ও গভীরতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পাশাপাশি হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে চলে সপ্তাহব্যাপী শুনানি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আরোপ করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। জানা গেছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকিকে জনিয়েছিলেন, তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত বাইডেন ও তাঁর ছেলের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত রাখা হবে। ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ অনেক রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার উদ্যোগ এটাই প্রথম নয়। বিল ক্লিনটন সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৯৯৮ সালে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। এ ছাড়া অ্যান্ড্রু জনসন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে ১৮৬৮ সালে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। তবে তাঁদের কাউকেই সিনেট দোষী সাব্যস্ত করেনি।