ঋতুস্রাবের কারণে আটকে রাখা কিশোরীর মৃত্যু

Looks like you've blocked notifications!
নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয় ঋতুবতী নারী ও কিশোরীদের। ছবি : এএফপি

নেপালের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের ছোট্ট আলো-বাতাসহীন ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল তাকে। ছোট্ট সেই ঘরটিতে বাতাসের এতই স্বল্পতা ছিল যে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছে রোশনি তিরুয়া নামের ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে।

ওই কিশোরীর অপরাধ, প্রকৃতির নিয়ম মেনে তার শরীরে এসেছিল ঋতুচক্র। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে রক্তস্রাবের কারণে তাকে বন্দি করে রাখা হয় মাটি আর কাঠ দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোনো একটি নিয়মের বেড়াজালে জোর করে রোশনিকে ঘরে আটকে রাখা হয়। আর সেই ঘরে অক্সিজেনের অভাবে মারা যায় সে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৪৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে আচাম জেলার গাজরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গত রোববার ওই ছোট ঘরটি থেকে রোশনির লাশ উদ্ধার করেন তার বাবা।

গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে।

এ বিষয়ে নেপালের সানফেবাগারের পুলিশ কর্মকর্তা বদ্রি প্রসাদ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানিয়েছেন, তাঁরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অক্সিজেনের অভাবে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে সে। তিনি আরো জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওই ছোট্ট ঘরে সে আগুন জ্বালাত। কিন্তু সেই ধোঁয়া বাইরে যাওয়ার কোনো পথ ছিল না।

ঋতুবতী মেয়েদের ঘরে আটকে রাখার প্রথার নাম চাওপাদী। এই প্রথা অনুসারে ঋতুস্রাব চলাকালে নারীদের অপবিত্র মনে করা হয়। কখনো কখনো তাঁদের পশুর ঘরে বাস করতে বাধ্য করা হয়।

২০০৫ সালে আইন করে এই প্রথা বাতিল করে নেপাল সরকার। কারণ, পশুর ঘরে বাস করার কারণে বহু নারী ও কিশোরীর পশু বা সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। এমনকি অরক্ষিত এসব স্থানে বাস করার সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। তবে এর পরও নেপালের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো এই প্রথা সচল আছে।

দেশটির বহু মানুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, ঋতুবতী কিশোরী বা নারীদের আলাদা করে না রাখলে তারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। এই সময় কিশোরী বা নারীদের দুধ পান করাও নিষিদ্ধ থাকে। এমনকি খাবারও পরিমাণে কম পায় তারা।

এদিকে এসব ঘটনা বন্ধে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তবে সরকারের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এসব কুসংস্কার এত সহজে বন্ধ করা সম্ভব না।

সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে নেপালের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে সামাজিক আচরণ ও মনোভাব বদলাতে সময়ের প্রয়োজন বলেও মনে করছে তারা।