দুবাইতে আবাসন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর বিপ্লব

Looks like you've blocked notifications!
সংযুক্ত আরব আমিরাতে মেধা ও শ্রম দিয়ে আবাসন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন বাংলাদেশি মো. ইয়াকুব সুনিক। ছবি : এনটিভি

সংযুক্ত আরব আমিরাতে মেধা ও শ্রম দিয়ে আবাসন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন বাংলাদেশি মো. ইয়াকুব সুনিক। দেশটির দুবাইয়ের সমৃদ্ধ নগরী ইন্টারন্যাশনাল সিটি ও জেবল আলীতে ‘সরফুদ্দিন রেস্টুরেন্ট’ নামে তাঁর দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠা করেছেন মারহাবা রিয়েল স্টেট নামের আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এই দুটি ব্যবসা তাঁকে এনে দিয়েছে ব্যাপক সফলতা। সফল একজন ব্যবসায়ীর পাশাপাশি তিনি একজন মানবতাবাদী সমাজকর্মী হিসেবে প্রবাসীদের কাছে পরিচিত।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিপ্লব ঘটানোর নেপথ্যে রয়েছে ইয়াকুব সুনিকের মেধা ও শ্রম। তবে ২০১২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধ না হলে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার গল্প আরো অনেক বিস্তৃত হতে পারত।

১৯৯৯ সালে ইয়াকুব সুনিক এক রকম শূন্য হাতেই আমিরাতে আসেন। সে সময় এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় ভিসা নিয়ে দুবাই আসেন তিনি। প্রথমে দুবাইয়ের হামেরিয়া এলাকায় একটি সবজির দোকানে ছয় মাস কাজ করেন। এরপর তিনি শুরু করেন আবাসন ব্যবসা। দীর্ঘ আট বছর ধরে এই ব্যবসা করেন ইয়াকুব সুনিক। গড়ে তোলেন নিজের মারহাবা রিয়েল স্টেট প্রতিষ্ঠান। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

দুবাইয়ের শাসক দুবাইকে সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে গড়তে পরিকল্পনা নেন। তখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুবাইয়ের বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি চায়না এলাকায় ইয়াকুব সুনিক গড়ে তোলেন সরফুদ্দিন রেস্টুরেন্ট নামক একটি অভিজাত রেস্তোরাঁ।

এরপর ২০০৯ সালে দুবাইয়ের আলকুজ এলাকায় ইয়াকুব সুনিক গড়ে তোলেন সরফুদ্দিন রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় শাখা। সম্প্রতি তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় একটি অভিজাত রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা করেছেন।

মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পরিবার-পরিজনদের সাথে ইয়াকুব সুনিক। ছবি : এনটিভি

মো. ইয়াকুব সুনিক বলেন, ‘এই রেস্টুরেন্টকে আমি আগামী দিনে ব্র্যান্ড রেস্টুরেস্ট হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। ভোজনরসিকদের জন্য সরফুদ্দিন রেস্টুরেস্টের রকমারি খাবার অনেক আগেই মন কেড়ে নিয়েছে। যদি আমিরাতের অবস্থা পরিবর্তন হয়, তাহলে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আমিরাতের সব ভোজনরসিকের জন্য প্রতিটি স্টেটে চেইন রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’

১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন খাজা রোডের মনো কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ইয়াকুব সুনিক। মরহুম মুন্সি মিয়া ও আনোয়ারা বেগমের তৃতীয় সন্তান তিনি। ছোটবেলায় তিনি বাবা-মাকে হারান। এতিম হয়েও পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিলেন ইয়াকুব সুনিক। স্থানীয় এসএমসি স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনার সময়ে জীবিকার তাগিদে তিনি বিদেশ যেতে উদ্যোগী হন।

২০০৫ সালে প্রবাসে থাকার সময়ে শরীফা আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন ইয়াকুব সুনিক। তাঁদের পরিবারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে জান্নাতুল সাইফা, মেজো মেয়ে জান্নাতুল তাইয়েবা ও ছোট ছেলে মো. সাঈফ। এঁরা সবাই দুবাইয়ে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছেন।

ইয়াকুব সুনিক বলেন, ‘মা-বাবা হারিয়ে আমি যখন নিঃস্ব ছিলাম তখন মানুষের অসহায় অবস্থা আমি ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি। তাই যতদিন আমার সচ্ছলতা থাকে, ততদিন আমি মানুষের সেবা করে যেতে চাই।’ তিনি নিজ এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, গরিব অসহায় ছেলেমেয়েদের বিয়েসহ এলাকার বিধবা নারীদের অর্থসহায়তা দেওয়ার কথা জানান।

সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে আগামীতে দেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবেন বলে জানান ইয়াকুব সুনিক। এখন তিনি প্রবাসে বিশেষ করে আরব আমিরাতে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের অবস্থান সুসংহত করতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের রেমিটেন্স-প্রবাহ অব্যাহত রাখতে ভিসা জটিলতার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে মনোযোগী হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

ইয়াকুব সুনিক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, অসংখ্য প্রবাসী ব্যবসায়ী আছেন যাঁরা বছরের পর বছর ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে হতাশায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে পরিশ্রম ও নিষ্ঠা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে সহায়ক ভূমিকা রাখে, ইয়াকুব সুনিক তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, ‘শুধু টাকা অর্জন করে নিজেকে পরিবর্তন করবে তা নয়, সমাজ পরিবর্তনেও এগিয়ে আসতে হবে। ইয়াকুব সুনিক তাঁর অর্জিত উপার্জন দিয়ে শুধু নিজেকে বদলে দেননি, তাঁর এলাকার অবস্থা বদলে দেওয়ার ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা ইয়াকুব সুনিকের মতো নীতি-আদর্শ গ্রহণ করে যেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এটাই কাম্য থাকবে।’